নিজস্ব প্রতিবেদক, গাইবান্ধা:
ভোটারের তথ্যে গরমিল, সেবা সংস্থার বিল বকেয়া ও আয়কর রিটার্ন দাখিল না করায় গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনের ১৭ জনের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ের দ্বিতীয় দিনে এসব প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
গাইবান্ধা জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে ৫২ প্রার্থীর মধ্যে ৩৫ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে জেলা রিটানিং কর্মকর্তা। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ১৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল। এ সময় স্ব-স্ব আসনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রার্থীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গাইবান্ধা- ১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মনোনয়ন বাতিল করা পাঁচজন হলেন- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. হাফিজার রহমান সরদার, গণফ্রন্টের শরিফুল ইসলাম, স্বতন্ত্র মো. মোস্তফা মহসিন, আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার ও এবিএম মিজানুর রহমান।
আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ দশটি রাজনৈতিক দল ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট ১১ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। বৈধ প্রার্থীরা হলেন- জয়নাল আবেদীন (স্বতন্ত্র), আবু বকর সিদ্দিক (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ), গোলাম আহসান হাবিব মাসুদ (জাসদ), ফকরুল হাসান (বাংলাদেশ কংগ্রেস), ওমর ফারুক সিজার (বিএনএফ), মোশাররফ হোসেন বুলু (জাকের পার্টি), শামীম হায়দার পাটোয়ারী (জাপা), আফরুজা বারী (আ’লীগ), আইরিন আকতার (বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি), খন্দকার রবিউল ইসলাম (বাংলাদেশ সংস্কৃতিক মুক্তিজোট), মর্জিনা খান (এনপিপি)।
গাইবান্ধা- ২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ পাঁচজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। মনোনয়ন বাতিল করা পাঁচজন হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ্ সারোয়ার কবীর এবং তার স্ত্রী মাসুমা আক্তার, রফিকুল ইসলাম, সাজেদুর রহমান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবু তাহের সায়াদ চৌধুরী।
আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলের ৫ প্রার্র্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। বৈধ প্রার্থীরা হলেন- আব্দুর রশিদ সরকার (জাপা), মাহবুব আরা বেগম গিনি (আ’লীগ), গোলাম মারুফ মনা (জাসদ), জিয়া জামান খাঁন (এনপিপি), জহুরুল ইসলাম (জাকের পার্টি)।
গাইবান্ধা- ৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে দুইজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। মনোনয়ন বাতিল হওয়া দুইজন হলেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) এস.এম খাদেমুল ইসলাম খুদি ও স্বতন্ত্র প্রার্থি আবু জাহিদ নিউ।
আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ সাতটি রাজনৈতিক দল ও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট ১০ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। বৈধ প্রার্থীরা হলেন- আজিজার রহমান বিএসসি (স্বতন্ত্র), মোস্তফা মনিরুজ্জামান (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ), উম্মে কুলসুম স্মৃতি (আ’লীগ), মঞ্জুরুল হক সাচ্চা (বিএনএম), মফিজুল হক সরকার (স্বতন্ত্র), জাহাঙ্গীর আলম (এনপিপি), সাহরিয়া খান বিপ্লব (স্বতন্ত্র), মাহমুদুল হক (বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি), তোসাদ্দেক হোসেন সরকার (জাকের পার্টি), মইনুর রাব্বী চৌধুরী (জাপা)।
গাইবান্ধা- ৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে তিনজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়ন বাতিল হওয়া তিনজন হলেন- ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) রুমি আকরাম, স্বতন্ত্র জাহাঙ্গীর হোসেন ও শ্যামলেন্দু মোহন রায়।
আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ তিনটি রাজনৈতিক দল ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট ৪ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। বৈধ প্রার্থীরা হলেন- আবুল কালাম আজাদ (আ’লীগ), কাজী মশিউর রহমান (জাপা), মনোয়ার হোসেন চৌধুরী (স্বতন্ত্র), আবুল কালাম (জাকের পার্টি)।
গাইবান্ধা- ৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে দুইজনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এরমধ্যে একজন হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা রাব্বী বুবলি ও এইচ.এম এরশাদ।
আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ চারটি রাজনৈতিক দল ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট ৫ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। বৈধ প্রার্থ হলেন- মাহমুদ হাসান রিপন (আ’লীগ), আতাউর রহমান সরকার (জাপা), অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম (বিকল্প ধারা), ফারুক মিয়া (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি) ও শামসুল আজাদ শীতল (স্বতন্ত্র)।
প্রসঙ্গত, গাইবান্ধার ৫টি আসনে মোট ৫২ জন মনোনয়ন জমা দেয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি।
উল্লেখ্য, গাইবান্ধার পাঁচটি আসনে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জেলার ৪টি পৌরসভাসহ ৭টি উপজেলার ৮১টি ইউনিয়নে ৬৪৬টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এই পাঁচ আসনে মোট ভোটার ২০ লাখ ৫২ হাজার ৬৯৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ জন এবং ১০ লাখ ৪১ হাজার ১০৯ জন নারী ভোটার রয়েছেন।