ছয় দফা নিউজ ডেস্ক: ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২ ধাপ এগিয়ে থাকা সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল প্রথম ম্যাচ ৩-০ গোলে জিতেছিল। এবার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে আরও বিধ্বংসী রূপ দেখিয়েছে সাবিনা খাতুনরা। সিঙ্গাপুরের জালে উৎসব করেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ৮-০ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে জোড়া গোল করেন তহুরা খাতুন ও ঋতুপর্ণা চাকমা। এ ছাড়া সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার, সুমাইয়া মাৎসুশিমা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র একটি করে গোল করেন।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে তিন গোলে হারের পর আজ প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিল সিঙ্গাপুর। তাই শুরুর একাদশে চারটি পরিবর্তন নিয়ে নেমেছিল অতিথিরা। এরপরেও বাংলাদেশের সামনে বাধা হতে পারেনি তারা। বরং আগের চেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স দেখা গেছে।
অন্যদিকে অপরিবর্তিত দল রেখে ম্যাচের শুরু থেকে বাংলাদেশের মেয়েরা আধিপত্য দেখাতে থাকে। স্বাগতিকদের আক্রমণের তোড়ে খেই হারাতে থাকে সিঙ্গাপুরের রক্ষণ। ফলে একচেটিয়া দাপট দেখিয়ে আগের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ব্যবধানে ম্যাচ জিতেছে।
ম্যাচ শুরুর ঘড়ির ৩ মিনিটে বাংলাদেশ গোল পেতে পারতো। মনিকা দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে দারুণভাবে বল বের করে নিয়ে লং পাস দিয়েছিলেন। ফাঁকায় থাকা সাবিনা বক্সে ঢুকে সময় নিয়ে সোজা গোলকিপার বরাবর শট মেরে সুযোগ নষ্ট করেন।
১১ মিনিটেও মধ্যমাঠ থেকে লং পাস পেয়ে সাবিনা বক্সে ঢুকে গোলকিপারকে ফাঁকায় পেয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে মেরে দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন। ৩ মিনিট পর সিঙ্গাপুর একবারই প্রতি আক্রমণ থেকে গোল করার চেষ্টা করেছিল। তবে সফল হতে পারেনি। নূর সায়েজআনি বক্সে ঢুকে জোরালো শট নিলেও গোলকিপার রুপনা চাকমা প্রতিহত করেন।
এরপর ম্যাচের ১৬ মিনিটে প্রথম গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সাবিনার ফ্রি-কিকে বক্সের ভেতরে আফঈদার ভলিতে মাশুরার হেড ৬ গজের মধ্যে তহুরা লক্ষ্যভেদ করেন। দুই মিনিট পর বাংলাদেশ ব্যবধান দ্বিগুণ করে ঋতুপর্না চাকমা। সাবিনার কর্নার এক ডিফেন্ডার ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি, পোস্টের সামনে থেকে ঋতুপর্ণা আলতো টোকায় জাল কাঁপিয়ে দেন।
২৪ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলে বাংলাদেশের স্কোরলাইন ৩-০ করেন তহুরা। বক্সের ভেতরে ঋতুপর্ণার জোরালো স্লাইডিং শট গোলকিপার ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি। সামনে থাকা তহুরা বল পেয়ে চকিতে জালে জড়াতে ভুল করেননি। বাকি সময় বাংলাদেশ আক্রমণ অব্যাহত রাখলেও প্রথমার্ধে আর ব্যবধান বাড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। ফলে ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে ড্রেসিংরুমে যায় সাইফুল বারী টিটুর দল।
বিরতি থেকে ফিরে বাংলাদেশ দলের খেলায় তেজ যেন আরও বেড়ে যায়। আক্রমণ অব্যাহত রেখে একের পর এক গোলে জাল কাঁপিয়েছে। ৫৭ মিনিটে ঋতুপর্ণার বাঁ প্রান্ত থেকে ছোট ক্রসে তহুরার প্লেসিং গোলকিপারের শরীরে লেগে প্রতিহত হয়। ফিরতি বলে অন্য প্রান্তে থাকা সানজিদা দৌড়ে এসে নিচু জোরালো শটে জাল কাঁপিয়েছেন। ৬১ মিনিটে এক ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে বক্সে ঢুকে ঋতুপর্ণা বাঁ পায়ে জোরালো শটে দলকে পঞ্চম গোল এনে দেন।
৭৫ মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়রের পাসে সাবিনা দারুণ প্লেসিং করে ষষ্ঠ গোল পাইয়ে দেন। শেষ দুটি গোল এসেছে দুই বদলি খেলোয়াড়ের কাছ থেকে। ৮৭ মিনিটে বদলি সুমাইয়া মাৎসুশিমা দারুণ এক সাইড ভলিতে গোল করে দর্শকদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেন। যোগ করা সময়ে শামসুন্নাহার জুনিয়র প্লেসিং করে দলকে অষ্টম গোল পাইয়ে সিঙ্গাপুরের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন।
সিঙ্গাপুর এই অর্ধে কোনো সুযোগই পায়নি। দীর্ঘদেহী বরুশিয়ার স্ট্রাইকার একাধিকবার বল পেলেও কিছুই করতে পারেনি। দেখাতে পারেনি পায়ের ঝলক। দুই ম্যাচে টানা জিতে বাংলাদেশের মেয়েরা বছরটি শেষ করলো দারুণভাবে।