পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
বুধবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪

মঙ্গা উধাও, উন্নয়নে উজ্জ্বল রংপুর

ছয়দফা নিউজ ডেস্ক:
দেড় দশক আগেও দেশবাসীর কাছে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুরের পরিচিতি ছিল মঙ্গাপীড়িত এলাকা হিসেবে। কিন্তু পরিচয় পাল্টে গেছে। গত সাড়ে ১৪ বছর একটানা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে এ জনপদ। রংপুর এখন দেশের উন্নত জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। যেখানে তিন বেলা খাবার জুটত না মানুষের, সেখানে উদ্বৃত্ত খাদ্যপণ্য। চাহিদার দ্বিগুণ খাদ্য উৎপন্ন হয় এখানে। বরং রংপুর থেকেই খাদ্য নিয়ে আশপাশের অনেক জেলা তাদের ঘাটতি পূরণ করছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১০ সালে রাজশাহী বিভাগ থেকে ৮ জেলা নিয়ে রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা করা হয়। এর ২ বছর পর ২০১২ সালে রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী রংপুরকে সিটি করপোরেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় এ দুই উপহারের মধ্য দিয়ে রংপুরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। এ ছাড়াও গত প্রায় ১৫ বছর শেখ হাসিনার সরকারের আমলে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। অবকঠামো খাতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠা, রংপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, পীরগঞ্জে মেরিন একাডেমি স্থাপন এবং আদালত বহুতল ভবন, সিভিল সার্জনের নতুন ভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, আধুনিক পুলিশলাইন্স নির্মাণ হয়েছে। একই সঙ্গে ১৭ তলাবিশিষ্ট ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, বিভাগীয় সদর দফতর, র‌্যাব-১৩ ব্যাটালিয়ন সদর দফতর, রংপুর শিশু হাসপাতাল ও পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সব অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু রংপুর।

রংপুরের উন্নয়নের আরেকটি অর্জন হতে যাচ্ছে ‘রংপুর-ঢাকা ছয় লেন মহাসড়ক’ প্রকল্প বাস্তবায়ন। বর্তমানে বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান। ২০১৯ সালের জুনেই শুরু হওয়ার কথা ছিল এ কাজ। কিন্তু ৬ মাস পর শুরু হলেও এখন রংপুর জেলা অংশে নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এই ছয় লেন সড়কের কাজ শেষ হলেই ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার বিপ্লব ঘটবে। তখন ৫ ঘণ্টায় রংপুর থেকে রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবে এ এলাকার মানুষ।

রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, খাদ্য উৎপাদন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার, সামাজিক নিরাপত্তা, আধুনিক কৃষিব্যবস্থাসহ সব বিষয়ে উন্নয়নে রংপুরের চিত্র পাল্টে গছে। দেশের অন্য এলাকার মানুষ রংপুরকে মঙ্গা এলাকা হিসেবে জানলেও এখন আর তা নেই। কারণ রংপুর এখন চাহিদার দ্বিগুণ খাদ্য উৎপাদন করে অন্য জেলায় সরবরাহ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী নদীভাঙন রোধে তীর সংরক্ষণের ব্যবস্থার কাজ চলমান। একই সঙ্গে খনন করার কারণে শুষ্ক মৌসুমেও ছোট নদীতে পানি থাকছে। এতে ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। রংপুরের আলু এখন চার দেশে রফতানি হচ্ছে। আগামী দিনে আরও বেশি রফতানি হবে।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান ম-ল বলেন, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে সরকার আসার পর বেশ কিছু উদ্যোগের কারণে রংপুরে খাদ্য উৎপাদন বাড়তে থাকে। বর্তমানে এ জেলায় প্রতি বছর খাদ্য চাহিদা প্রায় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টন। সেখানে বছরে উৎপাদন হয় প্রায় ১০ লাখ ৩৯ হাজার টন। এ জেলার উদ্বৃত্ত খাদ্য অন্য জেলার মানুষের চাহিদা মেটায়। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যাপক ব্যবহার বেড়েছে। এতে উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদন খরচও কমেছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা থেকে মিষ্টি কুমড়া মালেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এ ছাড়া ২০২১ সালে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম প্রধানমন্ত্রী ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। আমরা আশা করছি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমও বিদেশে রফতানি হবে। এ জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

স্কুলশিক্ষক মো. আবদুল বাসেত বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রংপুরের চিত্র একেবারেই বদলে গেছে। রংপুর কী ছিল আর এখন কী হয়েছে! এটা সব শেখ হাসিনার অবদান। আমরা এখন সিটি করপোরেশনে থাকি। নগরের সুযোগ-সুবিধাও দিন দিন বাড়ছে। গ্রামে আমরা কৃষি কাজ করি। ডিজিটাল বাংলাদেশের ধান কাটার হার্ভেস্টিং মেশিন আসায় উৎপাদন খরচ কমেছে। ধান কাটার সময় শ্রমিকের অভাব থাকে। আর এতে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটলে বিঘা প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু হার্ভেস্টিং মেশিন দিয়ে ধান কাটলে লাগে মাত্র ১ হাজার টাকা। এতে সময় ও খরচ সাশ্রয় হয়। আমাদেরও টেনশন থাকে না।

রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের কৃষক মো. গছিম উদ্দিন বলেন, ‘একসময় আমরা ভাত খাবার পারতাম না। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আমাদের এখন ভাতের অভাব নেই। জমিতে একটা নয়, তিনটা ফসল ফলাই। দুবার ধান ফলাই। আরেকবার ভুট্টা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, পাটসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলাই। এখন তিস্তা ব্যারেজ হয়ে গেছে। এতে আমাদের এপার ওপার যাওয়া-আসা করা খুব সহজ হয়। আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই রংপুর শহরে যেতে পারি। আগে কোনো রোগী নিয়ে রংপুরে যাওয়ার সময় এই তিস্তা নদী পার হতে গিয়ে অনেকে মারা গেছেন। এখন আর অপেক্ষা করতে হয় না। রোগীকে ভ্যান, অটোতে নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারি। এসব উন্নয়ন হয়েছে শেখ হাসিনার হাতে। আমরা চাই, শেখ হাসিনা আরও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন। আবার তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হোন।’

একই ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের মো. সুমন মিয়া। তিনি আগে ঢাকায় কাজ করতেন। এখন রংপুরে একটি ল্যাবে কাজ করেন। রংপুরে তিনি সবসময় থাকেন না। বাড়ি থেকেই বেশিরভাগ সময় যাতায়াত করেন।

তিনি বলেন, আমাদের এ এলাকা এরশাদ সাহেবের এলাকা। কিন্তু গত সাড়ে ১৪ বছরে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকায় গঙ্গাচড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তিস্তা ব্রিজ হয়েছে। ব্রিজের নিচের অনেক জমি আমাদের। যখন তিস্তা ব্রিজ করেছে তখন কষ্ট পেয়েছি, কারণ জমি গেছে। কিন্তু এ ব্রিজের জন্য হাজার হাজার লোকের উপকার হয়েছে। এখন মন চাইলেই রংপুর শহরে যেতে পারি। কৃষকরা তার কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া করতে পারে। এখন আর কেউ মঙ্গা এলাকা বলে না। বেশিরভাগ জমিতে তিনটি ফসল হয়। কেউ আর না খেয়ে নেই। মানুষের যা চাহিদা তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদন হয়। এখন মঙ্গাপীড়িত জনপদ নেই। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এসবের মূল কারিগর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হোন- এটাই আমরা চাই।

তথ্যসূত্রঃসময়ের আলো

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ