পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

ফেলনা প্লাস্টিক বর্জ্যে বৈদেশিক মুদ্রা

কায়সার রহমান রোমেল:
কাচের শিশি অথবা চীনামাটির থালা কিংবা মাটির টব- এসবকিছুরই বিকল্প হিসেবে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক। অপেক্ষাকৃত সস্তা, বহনযোগ্য হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব কাজেই বাড়ছে প্লাস্টিক পণ্যের উপস্থিতি।

অপচনশীল এসব প্লাস্টিক প্রায় শতভাগই রূপ নিচ্ছে মারাত্মক ক্ষতিকর বর্জ্যে। তবে ফেলনা এসব বর্জ্য রিসাইকেল করে বিদেশে রপ্তানির সুযোগে পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষার পাশাপাশি মিলছে বৈদেশিক মুদ্রাও।

সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জসহ মহিমাগঞ্জের কুমরাডাঙ্গা, জীবনপুর, টাউন ক্লাব মাঠ, সাহেব বাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কারখানা। এতে কর্মসংস্থানের ‍সুযোগ পেয়েছেন এসব এলাকার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে উচ্ছিষ্ট প্লাস্টিক বোতল থেকে কাঁচামাল তৈরির কারখানা ‘এমেক্স রিসাইক্লিং’-এর পরিচালক শাহনেওয়াজ আলম জুয়েল বলেন, ভাঙারিরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বোতল সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন এখানে। সেখানে প্রথমে একই রঙের বোতলগুলোর মধ্যে অন্য কোনো রঙের বোতল আছে কি না, তা যাচাই করা হয়। একেক সময় একেক রঙের বোতল দিয়ে কাঁচামাল তৈরি করা হয়।

বোতলগুলো ক্রাশার মেশিনে টুকরো (ফ্লেক্স) করা হয়। এরপর ওয়াসিং মেশিনে সোডা ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ফ্লেক্সগুলো ধোয়া হয়। এবার এগুলো একটা সাধারণ পানিভর্তি চৌবাচ্চায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ছাঁকনি দিয়ে তুলে হাইড্রো মেশিনে পানি ঝরানো হয়। হাইড্রো মেশিন থেকে নামিয়ে আনার পর অন্য রঙের দু-একটা ফ্লেক্স থাকলে তা আলাদা করে নেওয়া হয়। শেষে ২৫ কেজি করে ফ্লেক্স প্যাকেট করা হয়। ২৫ কেজির ৫০০ বস্তায় হয় এক কনটেইনার। এক কনটেইনার ফ্লেক্স উৎপাদন করার পর তা চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। সেখান থেকে জাহাজে করে ফ্লেক্স যায় বিভিন্ন দেশে।

‘এমেক্স রিসাইক্লিং’-এর ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্লাস্টিকের বোতল (বর্জ্য) রিসাইক্লিং হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।এখানে কর্মরত শ্রমিকরা প্রতিদিন ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা মজুরি পান। ভাঙারির কাছ থেকে এসব পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী প্রকারভেদে প্রতিটন ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা দরে কেনা হয়। পরে তা রিসাইক্লিং করে ৬০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা প্রতিটন দরে বিদেশে রপ্তানি করা হয়।

এ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, যেহেতু এ শিল্পটি আমাদের পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করছে তাই শিল্প রক্ষায় সরকারের ইনসেনটিভ বাড়ানো উচিত। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার দাবি করেন তারা। শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, প্লাস্টিক সংগ্রহে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পাশাপাশি, শক্তিশালী রিসাইক্লিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শুধু আর্থিক লাভ নয়, পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থেই প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার পদ্ধতির সম্প্রসারণ চান তারা।

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ