ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
মেশিন আর তাঁতের খট খট শব্দে মুখর গ্রামের পর গ্রাম। শীতবস্ত্র তৈরির ধুম পড়েছে ছোট-বড় হাজারো কারখানায়। কারখানায় তৈরি শীতবস্ত্র বিক্রির জন্য প্রস্তুত চার শতাধিক বিপনি বিতান। বলছিলাম গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের নয়ারহাট ও তাকে ঘিরে কিছু গ্রামের কথা, যেখানকার ব্যবসায়ীদের আশা এবারের মৌসুমে বিক্রি হবে অন্তত ৫শ’ কোটি টাকার শীতবস্ত্র।
বিষন্ন ঝড়া কাশের গুচ্ছের সাথে বিদায় নিয়েছে শরৎ। প্রকৃতিতে এখন হেমন্তের শিশির আর শীত শীত হাওয়া। সামনে শীত নিবারনে শীতবস্ত্র যে লাগবেই। তাইতো- প্রতিবছরের মতো এবারো শীতবস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের নয়ারহাট। রঙ-বেরঙের সুতোর মিশেলে রকমারী শীতবস্ত্র দিয়ে সাজানো বিপনি বিতান। প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে ওঠা হাটের শো-রুমগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে সোয়েটার, কার্ডিগেন, মোজা, মাফলার, টুপিসহ অন্তত দেড়শ’ ধরনের শীতবস্ত্র। বিভিন্ন আকার ও ডিজাইন ভেদে দাম ধরেন ব্যবসায়ীরা। পাইকারী এমনকি খুচরা পর্যায়েও শীতবস্ত্র বেচাকেনা হয় এখানে।
নয়ারহাটের এসব পোশাক তৈরি হয় গোবিন্দগঞ্জের কোচাশহর ইউনিয়নের পেপুলিয়া-কানাইপাড়া, মুকুন্দপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে। পরে তা নয়ারহাটের চার শতাধিক শোরুম থেকে পাইকারদের হাত ঘুরে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
উদ্যোক্তারা জানান, দেশ ভাগের পর মাড়োয়ারীদের কাছে পাওয়া হস্তচালিত দুটি যন্ত্র দিয়ে শুরু হয় কোচাশহরের হোসিয়ারী শিল্পের যাত্রা। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে-গ্রামে। বগুড়ার আদমদীঘী উপজেলার শাওইল থেকে নিয়ে আসা ঝুটের সুতা এখানকার অন্যতম প্রধান কাচামাল। মানসম্মত শীতবস্ত্রের জন্য পাশের দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশের দামী সুতাও ব্যবহার হচ্ছে এখন।
গত বছর শীত মৌসুমে বেসরকারী টেলিভিশনে খবর প্রচারের পর গোবিন্দগঞ্জের নয়ারহাটে মোবাইল নেটওয়ার্ক সঙ্কট সমাধান হয়েছে। একই সাথে রাস্তাও সংস্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাস্তা এতোটাই সরু বড় ট্রাক চলাচল করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। তবে এখনো নয়ারহাট বা কোচাশহরে ব্যাংকের কোন শাখা চালু হয়নি। কোচাশহরে একটি বেসরকারী ব্যাংকের এজেন্ট শাখা থাকলেও তা কাজে আসেনি। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা বেচাকেনা হলেও নয়ারহাট বা পার্শ্ববর্তী কোচাশহরে ব্যাংক না থাকায় টাকা জমা ও তোলার জন্য কয়েক কিলোমিটার দুরে গোবিন্দগঞ্জে যেতে হয়। এতে ঝুঁকি আর ভোগান্তিতে পড়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী মালিকদের অভিযোগ- একইসাথে দুর্ভোগ বেড়েছে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে। ঘনঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে শ্রমিকদের বেকার বসে থাকতে হয়।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে মহিমাগঞ্জ সড়ক ধরে কোচাশহর থেকে ডানে মোড় নিয়ে যেতে হয় নয়ারহাট। দেশে শীতবস্ত্রের চাহিদার এক তৃতীয়াংশ পূরণ হয় এখান থেকে। রপ্তানীর সুযোগ পেলে সম্ভাবনাময় হোসিয়ারী শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করা সম্ভব বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ নিয়ে এখনো নেয়া হয়নি কার্যকরী উদ্যোগ।
এখানকার শীতবস্ত্র রপ্তানীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান বলেন, কোচাশহরে ব্যাংকের শাখা স্থাপনের বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন।
কোচাশহর থেকে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়েছে হোসিয়ারী শিল্প। নারী পুরুষ মিলে এ শিল্পের সাথে এখন জড়িয়ে আছে লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবীকা। এবারের মৌসুমে এখান থেকে অন্তত ৫শ’ কোটি টাকার শীতবস্ত্র বিক্রির আশা ব্যবসায়ীদের।