ছয়দফা নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর আগমনকে ঘিরে নগরীতে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ভরে গেছে পুরো নগরী। বিভিন্ন স্থানে তোরণ স্থাপন করা হয়েছে। জিলা স্কুলের গোটা মাঠ সাদা কাপড়ে মোড়ানো হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে মঞ্চ। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের অপেক্ষায় আছে রংপুরবাসী।
বুধবার (২ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে আসবেন। এ সময় তিনি রংপুর জেলা স্কুল মাঠে জনসভা ও উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুরে আগমন উপলক্ষ্যে রংপুর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। উৎসুক নেতাকর্মীরা শুভেচ্ছা বার্তা সম্বলিত বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুনে সাজিয়ে ফেলেছে পুরো রংপুর মহানগর।
রংপুর নগরের শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি, পায়রা চত্বর, ডিসি মোড়, চেকপোস্ট, মেডিক্যাল মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ব্যানার ফেস্টুনে ভরে গেছে।
আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুরে আগমন উপলক্ষ্যে রংপুরের ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বইছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে রংপুরের প্রতিটা মানুষ প্রধানমন্ত্রীর আসার অপেক্ষায় আছেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করছি দলমত নির্বিশেষে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবেন। শুধু জেলা স্কুল মাঠ নয় গোটা শহর মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি বলেন, আগামীকালের জনসভাটি হবে গণমানুষের সভা। এ সভায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি যুবসমাজও মাঠে থাকবে। আর এ জনসভা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে যুবসমাজ কাজ করে যাবে। আমরা আশা করি জনগণের সমর্থনে আগামীতে রংপুর বিভাগের সবগুলো আসনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত হবে।
রংপুর নগরীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মহানগর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজার রহমান বলেন, জনসভার মাঠটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নগরীতে ১০ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৮ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- তারাগঞ্জে নবনির্মিত শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, নগরীতে অবস্থিত শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিংপুল, পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, রংপুর পালিচড়া স্টেডিয়াম, প্রায় ২০ কিলোমিটার নলেয়া ও আলাইকুড়ি নদী খনন কাজ, পীরগাছা উপজেলার চৌধুরানী থেকে শঠিবাড়ি সড়ক, পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি থেকে খালশপীর সড়ক, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জাগিরহাট, পীরগাছা ভায়া বালারহাট সড়কের গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর ওপর ব্রিজ, রংপুর গংগাচড়া-কাকিনা সড়কে নির্মিত ব্রিজ, রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার তিনতলা পলস্নীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম ফ্লাড সেন্টার নির্মাণ কাজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ মাল্টিপারপাস ভবন, রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের অফিস ভবন, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার হেলেঞ্চা ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার চতড়া ইউনিয়নে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে ১০ শয্যাবিশিষ্ট বেগম রোকেয়া মডার্ন হাসপাতাল, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খালশপীর ইউনিয়নে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মাদারগঞ্জে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৯ নং ওয়ার্ডে স্টোর ইয়ার্ড নির্মাণ, প্রায় ১২ একরের ভারার দহবিল, পাটোয়া কামরীল পুনঃখনন, ১৯ একরের চিতলী বিল পুনঃখনন, রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রংপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিস ভবন ও ১৫ একরের নৈমুলস্না বিল পুনঃখনন কাজ। যে ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন সেগুলো হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, রংপুর জেলা বিটাক কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বাংলাদেশ কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও লেডিস হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।
এছাড়া জনসভা সফল করতে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় বর্ধিত সভা করা হয়েছে। ওই সভায় চার মন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রতিদিন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন প্রধানমন্ত্রী জনসভা সফল করতে কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দু’টি নির্বাচনী জনসভা করেছিলেন। সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পর তিনি রংপুরে আসছেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।