নিজস্ব প্রতিবেদক, গাইবান্ধা:
আমন ধান কাটার পরপরই ভাল দাম পাওয়ার আশায় সেই জমিতে আগাম আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাইবান্ধার চাষিরা। চলতি আলুরোপণ মৌসুমে আলুবীজসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি হলেও আলুচাষে পিছপা হচ্ছেন না তারা। এ আলু একটু বেশি দামে বিক্রি হয় বলে অল্পপুঁজিতে আগাম আলু চাষ করছেন তারা। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে পৌঁছে দিতে ও ভালো দাম পাওয়ার আশায় ফসলের মাঠে আলু চাষে স্বপ্ন বুনছেন এখানকার কৃষক পরিবারগুলো।
আগাম জাতের আলু রোপণের জন্য হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ, জমি প্রস্তত, সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন কাজে দিনভর নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন চাষিরা। ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে স্বল্পমেয়াদি আগাম আউশ, আমন ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে এখন আলু রোপণ করছেন তারা। উৎপাদিত আলুর বাজার দর ভালো পাবেন এই আশায় দিনরাত আলুর জমি প্রস্তুত ও বীজ রোপণের কাজে ব্যস্তসময় পার করছেন আলুচাষীরা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, আলু রোপণকে ঘিরে মাঠজুড়ে কৃষকদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দ্বিগুণ লাভের আশায় মাঠে কেউবা জমি তৈরি, আগাছা পরিষ্কার ও বীজ সংগ্রহ নিয়ে নিজেদের মতো ব্যস্ত সময় পার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিক ধান উৎপাদনকারী জেলা হিসাবে পরিচিতি গাইবান্ধার কৃষকরা চলতি বছরেও অনেক জমিতে আগাম জাতের রোপা আমন ধান চাষ করেন। এ সব জমির রোপা আমনধান কাটার পর ফাঁকা হওয়া জমি ফেলে না রেখে আবার শুরু করেছেন বিভিন্ন প্রজাতির গোলআলুর আবাদ। এখানকার চাষীরা তাদের জমিতে চলতি মৌসুমে গ্রানুলা, হীরা, খুপরি সিন্দুরী, লালপাকরি, ফাটাপাকরি, সূর্যমুখী, আরিন্দা, রাজা, ডায়মন্ড ও কার্ডিনালসহ নানা জাতের আলু রোপণ করছেন। গত বছরের আলুর উচ্চমূল্যের কারণে চলতি মৌসুমেও ভাল দামের আশায় আলু চাষ অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু চাষীদের ঘরে বীজ সংরক্ষণ না করায় অনেক কৃষক চড়া দামে বীজ কিনে আলু চাষ করতে হীমসীম খাচ্ছেন।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলার সাত উপজেলায় ৭ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫শ’ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু লাগানো হয়েছে। এরমধ্যে চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাতেই ৫ হাজার ৪শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ উপজেলায় ইতোমধ্যে ৪শ’ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু লাগানো সম্পন্ন হয়েছে।
গাইবান্ধায় বিগত বছরগুলোতে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আলু চাষ করা হলেও এবছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেরিতে চাষ করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। জমিগুলো ত্রি-ফসলী হিসেবে ব্যবহার করেছেন তারা। প্রতি বছর আগাম আলু চাষ করে স্বাবলম্বীও হয়েছেন অনেক প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষক। বাড়তি দামের আশায় চাষিরা আগেভাগেই আলু রোপণ করছেন।
গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের নরেঙ্গাবাদ গ্রামের বাবলু মিয়া বলেন, আমন ধান কাটার পর জমি ফাঁকা ফেলে না রেখে আলু চাষ শুরু করেছি। বীজ, সারসহ সকল কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আলু চাষের ব্যয় বেড়েছে। তবে আলুর বর্তমান বাজার দর অব্যাহত থাকলে উৎপাদিত আলু বিক্রি করে বেশ লাভবান হবেন বলেও আশা করেন তিনি।
গোবিন্দগঞ্জের কাটাবাড়ী এলাকার কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এবছর ৩ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছি। এবার আলুর বীজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি কিনতে হয়েছে। তাতে আগেভাগে আলু উত্তোলন করতে পারলে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বাজার ধরা যাবে। এর থেকে কম দাম পেলে আমাদের আলু চাষ করে লোকসানে পড়তে হবে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, গতবছর গাইবান্ধা জেলায় আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হয়েছে। চলতি বছরও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় এবার আলু আবাদে ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষক। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উঁচু জমিতে আলুচাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিচু জমিতে আবহাওয়া দেখে আলুর বীজ রোপণের কথা বলা হচ্ছে। এছাড়া চাষীরা আলু চাষে যাতে কোন সমস্যা বা কোনভাবে ক্ষতির শিকার না হন এ জন্য তাদের প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।