পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শনিবার, অক্টোবর ১৯, ২০২৪

গাইবান্ধায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩০ সে:মি উপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাইবান্ধা:
ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাংলাদেশ অংশেও তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ৯০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল ৯ টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে ২৯.০৫ মিটার। যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার প্রভার পড়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। এই উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।

এর আগে বুধবার থেকে নদী পাড়ের মানুষজনকে সতর্ক করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দিনভর মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন। তিস্তা নদী বেষ্টিত চর ও নিচু অঞ্চলের মানুষকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, পাড়া সাদুয়া, কানিচরিতা বাড়ি, রাঘব, কারেন্ট বাজার, বেলকা ইউনিয়নের তালুক বেলকা, জিগাবাড়ি, পঞ্চানন্দ পলাশতলা, বেলকা নবাবগঞ্জ ও কিশামত সদর,, কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামেরচর, কাজিয়ারচর, পোড়ার চর, কেরানির চর, রাজার চর, মিন্টু মিয়ার চরসহ তারাপুর, চন্ডিপুর ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের নি¤œœাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

নদীর তীরবর্তী লোকজন জানান, হঠাৎ করে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বিপদের মধ্যে পড়ে গেছি। অনেক কষ্ট করে জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল লাগিয়েছি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

উপজেলার চরচরিতা বাড়ি গ্রামের মিন্টু মিয়া বলেন বলেন, হঠাৎ করে গতকাল বিকেল থেকে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে এই চরের বেশ কিছু নিচু এলাকা ডুবে গেছে। দু-একদিনের মধ্যে পানি সরে না গেলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তরীকুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে পানি আসার খবরে উপজেলার সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ সচেতনমহল, সুধিজন ও প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটকে নিয়ে জরুরি মিটিং করা হয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে। সর্বসাধারণকে গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সতর্ক থেকে নিকটস্থ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র বা নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। জরুরি যোগাযোগে নৌকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, চারজন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়ে উপজেলা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। তারা ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছন্নভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। যেকোনো প্রয়োজনে সেখানে যোগাযেগ করা হলে, তাৎক্ষনিক সব ধরণের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার (এনডিসি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা) জুয়েল মিয়া বন্যার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব ধরণের প্রস্তুতি থাকার কথা জানিয়ে বলেন, বন্যার আগাম বার্তা জানাতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তারা তা বাস্তবায়ন করেছে। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যেকোনো উপজেলা থেকে ২৪ ঘন্টা সরসরি সেখানে যোগাযোগ করা যাবে। পানিবন্দি মানুষদের সেবা দিতে বিভিন্ন দফতরের সাথে সাথে ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রয়েছে। একই সাথে আশ্রয়কেন্দ্র এবং ফ্লাডশেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি যোগাযোগেরর জন্য আধুনিক চারটি রেসকিউ বোট প্রস্তুত রয়েছে। বন্যাকালীন মানুষদের জন্য জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বন্যা স্থায়ী হলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য শিশু খাদ্যসহ খাদ্য সহায়তা এবং বন্যা শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ