পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

নাপিত্তাছড়া ঝরনার অপার সৌন্দর্য

আজহার মাহমুদ
বর্ষার সময়ই যেন ঝরনা তার পুরো সৌন্দর্য্যটুকু মেলে ধরে। তাই ঝরনা দেখতে ছুটির দিনে আমরা ৫ বন্ধু মিলে চলে গেলাম চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়া ঝরনায়। নাম শুনলে হয়তো একটু অদ্ভুত মনে হতে পারে। তবে এই অদ্ভুত নামের ঝরনাটিতে পাবেন চমৎকার ট্র্যাকিং আর প্রকৃতি দেখার সুযোগ। বোয়ালখালী থেকে ২ বন্ধু এবং এক বড় ভাই এসেছেন। আর চট্টগ্রামে আমরা দুই বন্ধু তো আছিই। মোট ৫ জনের দল সকাল আটটায় চট্টগ্রামের এ কে খান থেকে রওনা দিলাম মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারি হাটের উদ্দেশ্যে। চট্টগ্রাম একে খান থেকে ঢাকা-কুমিল্লার বাসে উঠে নয় দুয়ার বাজার যেতে হবে। জনপ্রতি ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা ।

বাসে করে দুই ঘণ্টায় পৌঁছালাম নয়দুয়ারি হাটে। এখানকার কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে ঝরনা দেখতে যাওয়ার রাস্তা । প্রয়োজনে গ্রাম থেকে একজন গাইড নিয়ে নিতে পারেন, ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় ৪/৫ ঘণ্টার জন্য। আমরাও গাইড নিলাম। তার নাম আব্দুল করিম। পারিশ্রমিক নেবেন ৪০০ টাকা সঙ্গে খাবার।

যাত্রা শুরু হলো পাহাড়ি অরণ্যে ঝিরিপথ পথে । আমাদের গাইড করিম ভাই বলেন, এখানে মোট ৪টি ঝরনা আছে- টিপরাখুম ঝরনা, কুপিটাকুম ঝরনা, মিঠাছড়ি ঝরনা ও বান্দরখুম ঝরনা। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ এবং প্রচণ্ড গরম আমাদের কিছুটা ক্লান্ত করেছে। তবে যত যাচ্ছি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। বড় বড় পাথর আর পানি সঙ্গে বিশাল পাহাড়ের খাদ। । দুপাশে পাহাড় আর মাঝখানে সরু রাস্তা। মাঝে মাঝেই বড় বড় পাথর অতিক্রম করতে হচ্ছে, কখনো ছোট ছোট পানির গর্ত । আবার কখনো উঠতে হচ্ছে পাহাড়ে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে পুরো পথ জুড়েই। আমরা প্রথম ঝরনাটির পেলাম তার নাম টিপরাখুম। এই ঝরনার পানি খুব স্বচ্ছ নয়। এর প্রায় ১০ থেকে ২০ মিনিট যাওয়ার পর ২য় ঝরনা কুপিকাটাকুম পেলাম। এর সৌন্দর্য বিমোহিত করবে আপনাকে। ঝরনার সামনের পানির অংশটা বেশ গভীর। ঝরনার একদম সামনে যেতে আপনাকে সাঁতার কাটতে হবে। ঝরনার পানি বেশ ঠান্ডা। প্রখর তাপের মধ্যেও আপনাকে স্বস্তি দেবে।

এখানে হালকা বিশ্রাম ও নাশতা করে মিঠাছড়ির ঝরনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। মিঠাছড়ি ঝরনাতে যাওয়ার সময় পাহাড়ের খাঁড়া ঢাল বেয়ে ওপরে উঠতে হবে। তাই যাদের ট্র্যাকিং করার অভিজ্ঞতা নেই তাদের সতর্ক থাকতে হবে। ২০ মিনিটের মধ্যেই মিঠাছড়ি ঝরনাতে পৌঁছে যাবেন। ঝরনাটির উচ্চতা বেশ। ঝরনার পানি ভাগ হয়ে দুদিকে ভাগ হয়ে যায়। নিজের চোখে না দেখলে বোঝানো মুশকিল। বর্ষার সময় এ সৌন্দর্য অতুলনীয়।

মিঠাছড়ি ঝরনাতে কিছুক্ষণ থাকার পর শেষ ঝরনা বান্দরকুম বা বান্দরিছড়ার পথে যাত্রা শুরু করলাম। প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট ঝিরি পথ হাঁটার পর পেয়ে যাই বান্দরকুম। এই ঝরনা বাকি তিনটার থেকে আরও বেশি উঁচুতে। ঝরনাতে যাওয়ার ঝিরি পথটাও অনেক সুন্দর। বর্ষার সময় এই ঝরনা দেখতে আসাই ভালো। তাহলে ঝরনার সর্বোচ্চ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

অনেকটা সময় কাটানোর পর এবার ফেরার পালা। ফেরার সময়টা মনে হলো একটু বেশি লাগছে। প্রায় সন্ধ্যা নামতে শুরু করছে। আর বেশি সময় থাকা যাবে না। গাইড নেওয়ার সুবিধাটা উপলব্ধি করলাম আমরা শেষ সময়ে। যেদিক দিয়ে এসেছিলাম সেদিক দিয়ে সবাই যাচ্ছে। কিন্তু আমরা ফিরে আসছি ভিন্ন পথ দিয়ে যাচ্ছি। এই ভিন্ন পথে যাওয়ার কারণটা হচ্ছে সহজ রাস্তা। আর এই সহজ রাস্তাটা গাইড থাকার কারণেই চেনা। ঝরনার পাশেই পাহাড়ে বেয়ে ওপরে উঠতে হবে। এরপর অল্প হেঁটেই পাহাড় দিয়ে শুধু নামলেই চলবে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা নেমে গেলাম। তখনই বুঝলাম গাইড কেন প্রয়োজন। গাইড না থাকলে এমন সহজ পথ আছে কেউ জানতে পারতাম না। তবে পাহাড় বেয়ে ওঠা যেমন কষ্ট নামাও তেমন কষ্ট। এটা নাপিত্তাছড়া ঝরনা ভ্রমণে না আসলে বুঝতে পারতাম না।

ভ্রমণের আনন্দ বললে প্রথমেই বলতে হবে ট্র্যাকিংয়ের কথা। বড় বড় পাথর আর পাহাড়ের গহিনে যাওয়াটা সহজ বিষয় না। সঙ্গে অপূর্ব প্রকৃতি আর অপরূপ ঝরনা।

তথ্যসূত্রঃদেশ রুপান্তর

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ