পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

বাংলাদেশের নিজস্ব কার্ড ‘টাকা-পে’

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:

আন্তর্জাতিক কার্ডের ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয়ে চালু হল বাংলাদেশের নিজস্ব কার্ড ‘টাকা-পে’।

‘টাকা-পে’ হল এক ধরনের ডেবিট কার্ড। এ কার্ডের মাধ্যম প্রচলিত ভিসা বা মাস্টার কার্ডের মতই লেনদেন করতে পারবেন গ্রাহকরা।

বাংলাদেশের ভেতরে বিভিন্ন ব্যাংক এই কার্ড ইস্যু করতে পারবে, নিয়ন্ত্রণ থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে এক অনুষ্ঠানে এ কার্ডের উদ্বোধন করেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম লেনদেন করা হয় রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

‘টাকা-পে’ কার্ডের মত ভারতের রয়েছে ‘রুপি কার্ড’। একইভাবে শ্রীলঙ্কার ‘লঙ্কা-পে’, পাকিস্তানের ‘পাক-পে’, এবং মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবের ‘মাদা-কার্ড’ নামে নিজস্ব কার্ড রয়েছে। এবার ‘টাকা-পে’ চালুর মধ্য দিয়ে সেই তালিকায় যুক্ত হল বাংলাদেশও।

ডেবিট কার্ড দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে ক্রেডিট ও আন্তর্জাতিক কার্ড তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ডিসেম্বরে ‘টাকা-পে’ কার্ডের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ডুয়ল কারেন্সি বা দ্বৈত মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে।

তখন বাংলাদেশিরা ভারতে গেলে ‘টাকা-পে’ কার্ডের মাধ্যমে ভারতীয় মুদ্রা রুপিও ব্যবহার করতে পারবেন। আলাদাভাবে বিদেশি মুদ্রা, ডলার বা রুপি বহনের প্রয়োজন পড়বে না।

বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রতিবেশী দেশ ভারতেই সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ করছেন।

কী সুবিধা?

ব্যাংক হিসাবে থাকা আমানতের বিপরীতে যে কার্ড ব্যবহার করা হয় তা ডেবিট কার্ড। আর একটি সীমা বেঁধে দিয়ে ব্যাংক যে পরিমাণ ধার নেওয়ার সুযোগ দিয়ে কার্ড ইস্যু করে, সেটি হল ক্রেডিট কার্ড। গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে অর্থ না থাকলেও গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করতে পারেন।

ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ হওয়া অর্থ ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ব্যাংকে পরিশোধ করতে হয় বিনা সুদে। এরপর বকেয়া থাকা অর্থের ওপর সুদ যোগ করে ব্যাংকগুলো।

নগদ টাকা বহনের চেয়ে নিরাপদ ও লেনদেন সহজ হওয়ায় কার্ড ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। দেশে ৪৩টি ব্যাংক ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ইস্যু করছে। এছাড়া একটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ২৭ লাখের বেশি।

দেশে যতগুলো কার্ড ব্যবহার হচ্ছে তার সবগুলোই বিদেশি কোম্পানির তৈরি। একটি নির্দিষ্ট ফির বিপরীতে ব্যাংকগুলো এই কার্ড সেবা দিয়ে আসছে। এতে এক ব্যাংকের ইস্যু করা কার্ড অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথে লেনদেন করতে বাড়তি খরচ দিতে হয়। এছাড়া বছর শেষে গ্রাহককে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কার্ড ব্যবহারের ফি দিতে হয় ব্যাংকগুলোকে। তার সঙ্গে রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

এর বাইরে প্রি-পেইড কার্ড রয়েছে, যার ব্যবহার একেবারেই কম। গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংকের নেওয়া ফির একটি অংশ পায় কার্ড মালিক বিদেশি মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়।

কিন্তু ‘টাকা-পে’ কার্ড পরিচালিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) এর মাধ্যমে। ফলে এই কার্ড যে কোনো এটিএম বুথে সহজে লেনদেন করা যাবে। সেক্ষেত্রে দ্রুত ও নির্বিঘ্নে লেনদেন করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এই কার্ডের মাধ্যমে প্রচলিত কার্ডের চেয়ে খরচ অন্তত ৫-৬ শতাংশ কম হবে। তবে আসলে কী প্রভাব পড়ল তার ‘টাকা-পে’ কার্ড চালু হলেই বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।

প্রথম দিকে ৮ ব্যাংক

‘টাকা-পে’ কার্ড চালুর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে শুরুতে যুক্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি মিলিয়ে আটটি ব্যাংক।

কার্ড ব্যবহারে গ্রাহক সংখ্যায় এগিয়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক প্রথম দিকে ‘টাকা-পে’ কার্ড ইস্যু করার সুযোগ পাচ্ছে।

পরবর্তীতে অন্যান্য ব্যাংকগুলোও চাইলে এই কার্ড ইস্যু করতে পারবে। আর বাংলাদেশের জাতীয় ডেবিট কার্ড প্রস্তুতে কারিগরি বিষয় দেখভালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্যারিসভিত্তিক পরামর্শক ‘ফিম’কে।

কার্ডে ৪১ হাজার কোটি টাকা লেনদেন

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব ধরনের কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েই চলছে। গত অগাস্টে কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেন হয় ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এক বছর আগে যা ছিল ৩৬ হাজার ৭৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার।

গত অগাস্টে কার্ডে স্থানীয় মুদ্রা টাকায় লেনদেন হয় ৪০ হাজার ৩২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন হয় ৬৫৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কার্ডে মোট লেনদেনের ৯৮ দশমিক ৩৯ শতাংশই হয়েছে দেশের ভেতরে।

বর্তমানে ভিসা, মাস্টার কার্ড, এমেক্স, ডিনারস, কিউ ক্যাশ, জেসিবি ইউনিয়ন পে’র মত ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সেবা রয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক লেনদেন সুবিধা সম্পন্ন হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে এসব কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন।

নিজস্ব কার্ড ব্যবহার বাড়লে কার্ডভিত্তিক লেনদেনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরতা কমে আসবে বাংলাদেশের। সাশ্রয় হবে বিদেশি মুদ্রা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত অগাস্টে শুধু ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় ৩৮ হাজার ১৬৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। দেশের ভেতরে তখন ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয় ২ হাজার ৪৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বেশি লেনদেন হয়েছে ভিসা কার্ডে। এই কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেনের ৭২ দশমিক ৬৬ শতাংশ সম্পন্ন হয় অগাস্টে।

এরপর মাস্টার কার্ডে ১৭ শতাংশ, এমেক্স ১০ শতাংশ, ডিনারস শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ, কিউ ক্যাশ প্রপ্রিটারি শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ, জেসিবি শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ ও ইউনিয়ন পে শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ।

অন্যদিকে গত অগাস্টে বাংলাদেশের নাগরিকরা বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করেছে ৪১৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দেশের বাইরে গিয়ে খরচের মধ্যে বেশি হয়েছে ভারতে। তখন ভারতে খরচ হয়েছে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ আর ৯ শতাংশ খরচ হয়েছে থাইল্যান্ডে।

তথ্যসূত্রঃবিডি নিউজ

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ