পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

ডেঙ্গু: দেরিতে শনাক্ত হলে আশঙ্কা বেশি

অধ্যাপক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুব উদ্বেগজনক। বছরের শুরুতে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও গত জুন মাস থেকে হঠাৎ করে তা বেড়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই ভয়ের কারণ। আমরা যদি শুরুতেই ডেঙ্গু শনাক্ত করতে পারি তা হলে সহজে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। কিন্তু দেরিতে শনাক্ত হলে আশঙ্কা বেশি থাকে।

এখন ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। তাই শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ধরনের উপসর্গ কিংবা লক্ষণ দেখা দিলেই প্রথম কাজ হবে রেজিস্টার্ড (নিবন্ধিত) চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অথবা হাসপাতালে আসা। এখন সব এলাকায় হাসপাতাল আছে। আর হাসপাতালে এসেই ডেঙ্গুর এনএস ওয়ান এন্টিজেন পরীক্ষাটি করে নিশ্চিত হতে হবে এটি ডেঙ্গু কি না। তা হলে অনেকেই সেফটিতে চলে যাবেন। কারণ অনেকের ডেঙ্গু বিষয়ে কোনো ধারণা নেই। তারা বুঝতে পারে না এটা ডেঙ্গু। ফলে অনেকেই দেরি করে হাসপাতালে আসে। ডেঙ্গুর প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ হলো- জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, গিঁটে ব্যথা, শরীরে পানি জমে যাওয়া, বুক-পেটে পানি জমা, মস্তিষ্কের প্রদাহ, খিঁচুনি হওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং শরীরে র‌্যাশ ওঠা। এ ছাড়াও ডেঙ্গুর আরও বেশকিছু উপসর্গের কথা বলতেই হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বমি হওয়া। কারও দীর্ঘস্থায়ী বমি হলে- এমনকি সেটা ওষুধ খেয়েও না কমলে দ্রুত হাসপাতালে এসে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। আরেকটি হলো অনেকেই ডায়রিয়ায় ভোগেন কিন্তু ওষুধ খেয়েও কাজ হয় না। কিন্তু হাসপাতালে এসে ডেঙ্গু পরীক্ষার পর তার পজিটিভ এসেছে। যদি রোগী যথাসময়ে হাসপাতালে না আসেন তা হলে তাকে রিকভার (পুনরুদ্ধার) করা খুব কঠিন হয়ে যায়। এমনকি তাদের মৃত্যুও হতে পারে। যদি ডেঙ্গুর রিপোর্ট পজিটিভ হয় তা হলে তার চিকিৎসা একরকম হবে, নেগেটিভ আসলে চিকিৎসা হবে অন্যরকম।

এবার এমন অনেক রোগী আসছে যারা ডেঙ্গু সংক্রমণের বিষয়টি বুঝতে না পেরে অন্য রোগের চিকিৎসা করছে। কারণ ডেঙ্গুর যে উপসর্গগুলো আমরা জানতাম, দ্বিতীয় দফায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এর কিছুটা ব্যতিক্রম হচ্ছে। তাদের আমরা বলছি কমপ্লিকেটেড ডেঙ্গু বা এক্সটেন্ডেড ডেঙ্গু সিন্ড্রোম। যারা সেকেন্ড টাইম ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে এ সংখ্যাটা কিন্তু এখন অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। জ্বর ও মাথাব্যথার সঙ্গে পেট ও বুকের ব্যথা দেখা যাচ্ছে। ব্যথার পরিমাণ খুব বেশি থাকে যেন মনে হয় শরীরের হাড়গোড় ভেঙে যাচ্ছে। ডেঙ্গু হলে রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা, শ্বেতকণিকা কমে যায়। তবে প্লাটিলেট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং এই দুশ্চিন্তা অনেক সময় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রোগীকে অবশ্যই যথাযথ চিকিৎসা দিতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ পানি, ফলের রস, স্যুপ, ডাবের পানি, স্যালাইন দেওয়া জরুরি।

ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ। তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলায় দিনে-রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙাতে হবে, মশা মারতে স্প্রে করতে হবে। মশার কামড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিজের বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বিশেষ করে পানি যেন না জমতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না।

লেখক : মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক

তথ্যসূত্রঃসময়ের আলো

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ