পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪

হাজার মানুষের মাছ ধরার উৎসব ‘বৈত’

কায়সার রহমান রোমেল:
‘বৈত’ নামকরণটি গাইবান্ধার আঞ্চলিক। খাল-বিল ও জলাশয়ের অল্প পানিতে মাছ শিকারের উৎসব। সাধারণত বহু লোকের একসঙ্গে মাছ ধরার উৎসবকে ‘বৈত’ বলে। ‘বৈত’ গাইবান্ধার গ্রামীণ ঐতিহ্য। বর্ষাকালের পর শরৎ ও হেমন্তের শেষে গ্রামের বড় বড় খাল-বিল জলাশয় যখন শুকাতে শুরু করে, তখন নামত ‘বৈত’। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন মৌসুম বদলেছে, বদলেছে সেই ঐতিহ্যের সময়ও। এখন শরতের শুরুতেই গাইবান্ধায় গ্রামের বিলগুলোতে নামছে ‘বৈত’। রোববার গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়ার বিলে নামে ‘বৈত’। এবারও এই উৎসবে ছিল হাজারো মানুষের ঢল। হাজার হাজার মানুষের দলগত মাছ শিকার।

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বিলপাড়ে জড়ো হতে থাকে মানুষ। কারও কাঁধে পলো, আবার কারও হাতে ঠেলা জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানান উপকরণ। ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জড়ো হয় এক স্থানে। মাছ শিকারের উদ্দেশে আসেন শিশু থেকে বৃদ্ধ বিভিন্ন বয়সি শৌখিন মৎস্য শিকারি। সব বয়সি মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। এরপর দল বেঁধে বিলের পানিতে নেমে মাছ শিকারের আনন্দে মেতে ওঠেন তারা।

গাইবান্ধা জেলার অন্যতম প্রাণের উৎসব এই ‘বৈত’। ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় চার মাসব্যাপী জেলা জুড়ে বিভিন্ন বিল ও জলাশয়ে এ মৌসুমে দল বেঁধে চলে মাছ শিকারের এ মহোৎসব। এতে পুরো জেলার শৌখিন মৎস্য শিকারিরা অংশ নিয়ে থাকেন। যেদিন যে বিলে মাছ শিকারে নামা হয়, তার আগের দিন হাট-বাজারগুলোয় ঢোল, শিঙা ও মাইক দিয়ে জানান দেওয়া হয়। যাপিত জীবনের নানা দুঃখ-কষ্টের পরও গ্রামের মানুষগুলো এই উৎসবে যোগ দিয়ে অভাব-অনটনের মাঝে খানিকটা আনন্দ খুঁজে নেয়। ধনী-গরিব ভেদাভেদ নেই এই উৎসবে। যার একটি পলো বা মাছ ধরার উপকরণ আছে, সেই নামতে পারে মাছ শিকারে। মাছ না পেলেও অনেকে শখের বসে অংশ নেয় এই উৎসবে।

রোববার গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়ার বিলে বৈতে অংশ নেওয়া মাছ শিকারিরা জানালেন, ‘অনেকটা শখের বসে ‘বৈত’ উৎসবে মাছ ধরতে আসি। মাছ পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে আমাদের আফসোস নেই। সবাই মিলে মাছ শিকারের আনন্দই যে আলাদা।’ বর্তমানে খাল-বিল ও জলাশয়ের আয়তন কমে যাওয়ায় কমে গেছে মাছ, ভাটা পড়েছে উৎসবের রঙে। বৈতে আসা শৌখিন মৎস্য শিকারিরা জানান, ‘বিলে মাছ অনেক কমে গেছে। আগে প্রচুর মাছ মিলত। শোল, গজার, বোয়াল, কাতলসহ অনেক রকম মাছ পাওয়া যেত। এখন তার অর্ধেকই পাওয়া যায় না।’ তাদের অভিযোগ, ‘প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে খাল-বিল ও জলাশয়সহ মাছের অভয়াশ্রম। উন্মুক্ত বিল-জলাশয় অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় আগের মতো আর ‘বৈত’ নামানো যায় না।’

তবে এবার জেলায় দুই দফা বন্যার পর গত রোববার ঘাগোয়ার বিলে বৈতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই প্রচুর পরিমাণে মাছ সংগ্রহ করতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। একসঙ্গে মাছ ধরার আনন্দ উপভোগ করেন সবাই। প্রতিবছর আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার এ সময়টার অপেক্ষায় থাকেন তারা।

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ