পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪

গাইবান্ধায় গাছে গাছে অভয়াশ্রম

পাখির জন্য অন্যরকম ভালোবাসা

কায়সার রহমান রোমেল:
জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পাখি। আগে গ্রামে গ্রামে হরহামেশাই দেখা মিলত নানা প্রজাতির পাখি। কালের আবর্তে এসব পাখপাখালি এখন হারিয়ে গেছে। উধাও হয়ে গেছে পাখির কলরবও। নিরাপদ আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাবে পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। পাখির নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত, পাখি নিধন রোধ ও পাখির প্রতি ভালোবাসায় গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি বেঁধে পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তুলে ভালোবাসার এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে গাইবান্ধার কয়েকজন যুবক। নিজেদের অর্থ খরচ করে তারা গাছে গাছে মাটির কলসি বেঁধে পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছে।

হারানো পাখি প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনতে এবং প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণে পাখির জন্য নিরাপদ বাসা তৈরিতে ‘ন্যাচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট প্রিজারভেশন অর্গানাইজেশন নিপো’ নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের যুবক আহম্মদ উল্যাহ। গোবিন্দগঞ্জের দরবস্ত, তালুককানুপুর, কোচাশহর ইউনিয়নসহ গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকায় পাখি এবং প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে নিবেদিতভাবে কাজ করছে ‘নিপো’র নিবেদিতপ্রাণ ৩৫ তরুণ ও যুবকের একটি দল।

পাখির জন্য অনন্য ভালোবাসা থেকে মাদ্রাসাপড়ুয়া ছাত্র আহম্মদ উল্যাহ নিজ গ্রামে পাখিদের বাসা তৈরি করার মাধ্যমেই সূচনা করে তার পাখি সংরক্ষণ কর্মসূচি। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে অবাধ বৃক্ষনিধনের কারণে পাখিরা তাদের নিরাপদ আবাসস্থল হারিয়েছে এবং খাদ্যসংকটের কবলে পড়েছে। ফলে পাখিদের স্বাভাবিক প্রজনন বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া গ্রামগঞ্জের নতুন প্রজন্মের মানুষ পাখিদের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল না হওয়ায় ব্যাপক হারে মারা যাচ্ছে পাখিরা। এছাড়া ফসল উৎপাদনে বিষাক্ত কীটনাশকের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাখিদের মৃত্যুর হারও বেড়েছে।

এই প্রতিক‚ল অবস্থা থেকে পাখিদের রক্ষায় তাই এগিয়ে এসেছে নিপো এবং তার সদস্যরা। তারা তালুককানুপুর ইউনিয়ন এবং পাশর্^বর্তী সমসপাড়া, ফকিরপাড়া, কবিরাজপাড়া, কাপাসিয়া, ছোটনাগবাড়ি গ্রামে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৭

এভাবে নিজ খরচে এসব গ্রামে দু’হাজার কলস স্থাপন করা হয়। এ পর্যন্ত গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গাছে মাটির হাঁড়ি, কলস স্থাপন ও গাছের শাখায় গর্ত করে ছোট ছোট মাটির পাতিল বসিয়ে প্রায় ৫ হাজার পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে বলে জানায় আহম্মদ উল্যাহ।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তাদের পাখি ও পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রম দেখার জন্য গোবিন্দগঞ্জে এসেছে। তাদের উৎসাহে ইতোমধ্যে গোবিন্দগঞ্জ থেকে নিপো তাদের কার্যক্রম গাইবান্ধা জেলার বাইরেও গাজীপুর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া এবং রংপুর জেলায় সম্প্রসারিত করেছে।

এ কাজের জন্য এই পরিবেশবাদী সংস্থা নিপো এবং আহম্মদ উল্যাহ রাজশাহী বিভাগীয় পরিবেশক পদক, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় পরিবেশ সংরক্ষণ সনদপত্র, জাতীয় পরিবেশ স্বর্ণপদক ও সনদপত্র এবং জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডসহ একাধিক পদক ও সনদপত্র পেয়েছে।

উত্তরপাড়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আলাউদ্দিন মিয়া ও গৃহবধূ খুরশিদা বেগমের ছেলে আহম্মদ উল্যাহ ইতোমধ্যে তার এ কাজের জন্য শুধু নিজ গ্রামেই নয়, গোটা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাতেই এখন অতিপরিচিত একটি নাম।

আহম্মদ উল্যাহ ও তার সংগঠন নিপো এবং নিপোর সদস্যদের শুধু একটিই চাওয়া দেশীয় পাখি সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। বাড়ির আঙিনায় বেশি করে গাছ লাগানোর পাশাপাশি পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকে যেন পাখির ক্ষতি না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাখি সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য ‘ন্যাচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট প্রিজারভেশন অর্গানাইজেশন-নিপো’ পাখির প্রতি ভালোবাসার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র।

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ