ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
তামিম ইকবাল নেই তো কী হয়েছে, আমাদের দলে তানজিদ হাসান তামিম আছে না-দলীয় অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এখন চাইলে এমন কথা বলতেই পারেন!
তামিম দেশসেরা ওপেনার, পরিসংখ্যান তাকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবথেকে সফল ব্যাটার হিসেবেও আখ্যা দেয়। আন্তর্জাতিক পরিম-লে টাইগারদের পক্ষে সবথেকে বেশি রান এবং সেঞ্চুরির মালিক এই বাঁহাতিই। ৫ অক্টোবর ভারতের মাটিতে শুরু হতে যাওয়া এবারের বিশ্বকাপে কোমরের চোট পাশ কাটিয়ে তিনি খেলবেন, এমনই প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় সেই প্রত্যাশা বিলীন। দলের সবথেকে নির্ভরযোগ্য ওপেনারকে বাদ দিয়েই গড়া হয়েছে বিশ্বকাপ দল। তার বাদ পড়ার পেছনে সাকিব আর হাথুরুই যে কলকাঠি নেড়েছেন, সেটাও এখন সবারই জানা।
পুরোপুরি ফিট নন, এমন একজন খেলোয়াড়কে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঘোর আপত্তি জানিয়েছিলেন কোচ এবং অধিনায়ক। তামিমকে দলে নেওয়া হলে দলের অধিনায়কত্ব করবেন না, সাকিব নাকি এমন হুমকিও দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতিকে। শেষতক সাকিব-হাথুরুর সঙ্গেই তাল মেলান তিনি। নাটকীয়তার পর বাদ দেওয়া হয় তামিমকে, ফলে ওপেনিংয়ে তৈরি হয় বড় শূন্যতা। লম্বা সময় তামিমের ওপেনিং পার্টনার হয়ে থাকা লিটন দাসের হঠাৎ ছন্দহীন হয়ে পড়া দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছিল একদিকে, অন্যদিকে তামিমের অনুপস্থিতিতে যাদের খেলানো হচ্ছিল ওপেনিংয়ে তারা বলার মতো কিছুই করে দেখাতে পারছিলেন না।
সবমিলেই বিশ্বকাপে দলের উদ্বোধনী জুটি নিয়ে বড় সমস্যাতেই ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। এই বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করে দেখানোর যে স্বপ্ন টাইগারদের, তামিমকে বাদ দেওয়ায় সেই স্বপ্ন অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে বলেও মনে করা হচ্ছিল। তবে শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গোয়াহাটিতে বিশ্বকাপের প্রথম গা গরমের ম্যাচে তানজিদ এবং লিটন ওই ভাবনায় কিছুটা হলেও ছেদ টানতে পেরেছেন। ইনিংসের সূচনায় নেমে যেভাবে খেলেছে এই যুগল, তা নতুন করে আশার ঝিলিকই দেখিয়েছে দল এবং ভক্তকুলকে। সাকিব-মোস্তাফিজ-শান্তদের অনুপস্থিতিতেও যেভাবে শ্রীলঙ্কাকে দুরমুশ করেছে টাইগাররা, তা লিটন-তানজিদের ছন্দে ফেরা ব্যাটিংয়েই সম্ভব হয়েছে।
গত বছরটা স্বপ্নের মতোই কাটিয়েছিলেন লিটন। কিন্তু ছন্দটা এ বছর ধরে রাখতে পারেননি ডানহাতি ওপেনার। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রতিনিয়ত, কিন্তু রান পাচ্ছিলেন না। এশিয়া কাপে তামিমের অনুপস্থিতিতেই দলভুক্ত হওয়া তানজিদও পারছিলেন না নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করতে। তবুও বিশ্বকাপের জন্য এই জুটির ওপরই রাখা হয়েছে আস্থা। প্রতিদান দেওয়ার জন্য তারাও যে তৈরি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেটাই দেখিয়েছেন দুজন। আগে ব্যাটিংয়ে নামা লঙ্কানদের ইনিংস ২৬৩ রানে থামিয়ে দিয়ে তা তাড়া করতে নামেন লিটন-তানজিদ। এরপর খেলতে থাকেন বাহারি সব শট। ২০.৪ ওভারে গড়ে উঠে ১৩১ রানের উদ্বোধনী জুটি।
জুটি ভাঙে লিটনের বিদায়ে, এর আগেই ১০টি নান্দনিক চারের মারে ৫৬ বলে নিজের নামের পাশে ৬১ রান জমা করে ফেলেন ডানহাতি ওপেনার। অনেক দিন পর তার সাবলীল ব্যাটিং, স্বস্তির বাতাসই বইয়ে দিয়েছে টাইগার শিবিরে। অন্যদিকে ১০টি চার আর দুটি ছক্কার মারে ৮৮ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলা তানজিদ বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি সত্যিকারেরই ‘জুনিয়র তামিম’। ওপেনিংয়ে প্রায় দেড় যুগ ভরসার প্রতীক হয়ে থাকা তামিমের অভাব পূরণের কিছু সক্ষমতা যে তার আছে, এই বাঁহাতি এদিন তা চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়ে দিয়েছেন। অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন তিনি।
বিশ্বকাপের মূলমঞ্চ রাঙাতে নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করার জন্য আরও একটি গা গরমের ম্যাচ পাচ্ছেন তানজিদ। সোমবার গোয়াহাটিতেই সেই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। সেখানেও যদি পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারেন তরুণ ওপেনার, তা হলে তার আত্মবিশ্বাসের ভিত মজবুত হবে আরও। অন্যদিকে লিটন তো পরীক্ষিত, নিজের দিনে যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্যই তিনি ত্রাস। এই বিশ্বকাপে বারবার যদি তার দিনই আসে এবং তাকে যোগ্য সাহচর্য দিতে পারেন তানজিদ, তা হলে দারুণ কিছুই করে দেখাতে পারবে টিম বাংলাদেশ।