পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন: আত্মবিশ্বাসী আওয়ামীলীগের তৃণমূল

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে বেগ পেতে হবে না আওয়ামী লীগকে।

পশ্চিমা দেশগুলো একের পর এক সরকারবিরোধী বিবৃতি দিয়ে আসছিল, যা অনেকটা বিএনপির পক্ষে ছিল। সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলো সেই অবস্থান থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসেছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে রয়েছে বলে দাবি দলটির নীতিনির্ধারকদের।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির আন্দোলনের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন তৎপরতায় অনেকটা ভাটা পড়েছে। একই সঙ্গে গত জি-২০ সম্মেলনের পর দৃশ্যপট আরও বদলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সফরের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা এখন অনেকটাই নির্বাচন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। এ ছাড়া রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং এর পরপরই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে সরকারের প্রতি তাদের বিশেষ সমর্থন ফুটে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন মহলের তৎপরতায় মনে হচ্ছিল সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। কারণ পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা ধারাবাহিকভাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। প্রতিটি বৈঠকের পর তারা ব্রিফিংয়ের বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতেও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। দেশটি বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তারা এই ভিসানীতির আওতায় আসবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছিল বিদেশিরা। কিন্তু সেটি এখন আর নেই। গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২২ সেপ্টেম্বর ওই অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন তিনি। এ ভাষণের মধ্য দিয়ে বিশ্বনেতাদের মনোযোগ কেড়েছেন শেখ হাসিনা।

দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতারা মনে করেন, সম্প্রতি দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের মনোযোগ কেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়া দিল্লি গিয়েছিলেন। সেদিনই বিকালে মোদির বাসভবনে তার সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের আগে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এতে বাংলাদেশ, ব্রিটেন, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অংশ নেয়। তখন বিশ্বনেতাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানেও বিশ্বনেতাদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জি-২০ সম্মেলনের সদস্যভুক্ত দেশ না হয়েও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মূলত বিশ্বনেতাদের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। একপর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার নিজের মোবাইল ফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সেলফি তোলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সম্মেলনের ফাঁকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যেভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, গুরুত্ব দিয়েছেন, দীর্ঘক্ষণ হাত ধরে রেখে কথা বলেছেন, তা কেবল মায়ের কাছে ছেলের আবদারের কথা মনে করিয়ে দেয়। পরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বাংলাদেশে আসেন। তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে বলেও এ সফরে জানান ম্যাক্রোঁ।

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, দেশি-বিদেশি সব পক্ষের তৎপরতায় গত দুই নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ বেশ প্রতিকূল অবস্থায় ছিল। কূটনৈতিক তৎপরতার প্রতিফলন বিএনপির আন্দোলনেও দেখা যাচ্ছিল। তারা রাজধানীসহ সারা দেশের একের পর এক সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি দিয়ে আসছিল। এতে দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত এক ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে সেই শঙ্কা এখন আর নেই। একই সঙ্গে গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দফতরে নেত্রী বাংলায় দেওয়া ভাষণে বিশ্বনেতাদের আবারও মন জয় করেছেন বলে বিশ্বাস দলের নেতাকর্মীদের। অর্থাৎ এখন আর আওয়ামী লীগের পেছন ফেরার সুযোগ নেই। কারণ শেখ হাসিনা শুধু একজন দক্ষ রাজনীতিবিদই নন, তিনি একজন দক্ষ কূটনীতিকও। গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে সেটাই ফুটে উঠেছে। তার দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস শুধু আওয়ামী লীগেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বনেতাদের মধ্যেও।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও বিদেশি চাপ অনেকটাই কেটে গেছে। জি-২০ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সেটি আমরা অতিক্রম করতে পেরেছি। বাংলাদেশ সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও বিশে^র শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি বিশ্বনেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। সুদক্ষ নেতৃত্ব, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব এবং কর্মকুশলতার উজ্জ্বল প্রভায় বিশ্বনেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এবার জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি সেখানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেত্রীর এসব উল্লেখযোগ্য কর্মকা-ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ সময়ের আলোকে বলেন, গত জি-২০ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। নেত্রী তার দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে তা অর্জন করেছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি বার্তা চলে আসছে। বিএনপি জনগণের চোখে ধুলা দিতে যে ধরনের ষড়যন্ত্র করছে, তা লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। বাইরের দেশের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক ও সৌহার্দ্য দেখে অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। বিএনপির উচিত আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর সময়ের আলোকে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বরিশাল আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। এতদিন বিএনপির আন্দোলন ও বিদেশিদের বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা সবকিছু মøান হয়ে গেছে। গত জি-২০ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের যেভাবে মনোযোগ কেড়েছেন, এরপর বিএনপি চুপসে গেছে। যদিও তারা এখনও সরকার পতনের এক দফা দাবি নিয়ে মাঠে আছে। তাদের দাবি, দাবিই থাকবে কোনো দিন আলোর মুখ দেখবে না।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন সময়ের আলোকে বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ কোনো ভয় পায় না। কারণ দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুধু বাংলাদেশের নেত্রী নন, তিনি বিশ্বনেত্রীও। তার অনন্য নেতৃত্বের ফলে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী।

তথ্যসূত্রঃসময়ের আলো

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ