গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
এখন আর গ্রাম-গঞ্জে সচরাচর পালাগানের আসর বসে না। অনেকটা হারিয়ে যাওয়া দেশীয় সংস্কৃতির অনন্য সম্পদের কথা আবার নতুন করে সবাইকে মনে করিয়ে দিলো এই পালাগানের আসর। সে গানের সুর-ছন্দ আর যুক্তি-তর্কে প্রাণ জুড়ালো শহুরে দর্শক-শ্রোতাদের।
‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শিল্প নিয়ে পৌঁছে যাব আমরা উন্নতির শিখরে’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সারা দেশেই গণজাগরণের শিল্প আন্দোলনের অংশ হিসেবে আয়োজন করছে গণজাগরণের পালাগান। এরই অংশ হিসেবে গাইবান্ধা জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় শনিবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গাইবান্ধা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের মঞ্চে ‘শরিয়ত-মারিফত’ শীর্ষক পালাগানের লড়াইয়ে অংশ নেন করিম দেওয়ান ও দোলন সরকারের দল।
শিল্প সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে শুরু হওয়া পরিবেশনা এগিয়ে যায় সহজিয়া সুরের পধ ধরে। সহজিয়া সেই সুর আর বাণীতে উঠে আসে জীবনের দর্শন থেকে শুরু করে আধ্যাত্মিকতা, প্রেম আর মাটির ঘ্রাণ। দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে এদিন অনুষ্ঠান শুরুর বেশ আগেই সরব হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমির আঙিনা।
গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির প্রাণ পালাগান শিল্পীদের পরিবেশনায় মোহিত হয়ে উপভোগ করেন অসংখ্য শহুরে দর্শক-শ্রোতা। তাইতো সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পর্যন্ত মিলনায়তনে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শহরের বুকে এমন পালাগান দর্শকদের মাঝে যে দারুণ সাড়া ফেলে, তা উপস্থিতি দেখেই বোঝা যায়।
পালাগানের আসর শেষে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও অমিতাভ দাশ হিমুনের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি শাহ মশিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক প্রমতোষ সাহা, জেলা কালচারাল অফিসার আলমগীর কবীর প্রমুখ।
পালাকার করিম দেওয়ান বলেন, ‘শরিয়তের আলেম ও মারেফতের ফকিরের বিতর্ক সুদূর অতীত কাল থেকেই চলছে। তবে পালা ও বিতর্কের সৌন্দর্য হলো ভিন্নমত নিয়েও সহাবস্থান করতে শেখা। সুফি-সাধকদের পালাগান-কবিগান আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। শিল্পকলা একাডেমি সে হারিয়ে যাওয়া গান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’
গাইবান্ধা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক প্রমতোষ সাহা বলেন, ‘পালাকাররা একেকজন দার্শনিক। তারা দর্শনের কথা বলেন। পালাগান বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতির ঐতিহ্য। বর্তমানে পালাগানের ঐতিহ্যে ভাটা পড়েছে। সে বিষয়কে অনুধাবন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সারা দেশে পালাগানের আসর হচ্ছে।’