ছয় দফা নিউজ ডেস্ক: ভোট বর্জন করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ভুল করছে মত দিয়ে অধিকার ও উন্নয়নকর্মী খুশী কবির বলেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত এতে জনগণই পরাজিত হয়।’
রবিবার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের আয়োজনে ইনসাইড আউটে অংশ নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধীরা সংসদে থাকলে বাইরে-ভেতরে কথা বলার সুযোগ থাকত। আবার ভোটে অংশ নিলে বলতে পারত কোথায়-কীভাবে কারচুপি হয়েছে।’
ইংরেজিতে সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই আয়োজনে বিএনপি ও সমমনাদের দ্বিতীয়বারের মতো ভোট বর্জন, আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর কার্যত নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ভোটের আমেজে ভাটা, দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে কোনও পর্যায়েই সেভাবে আলোচনা না হওয়া, নারী প্রার্থী মনোনয়নে দলগুলোর রক্ষণশীল মনোভাব, মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
খুশী কবীর দীর্ঘদিন ধরেই নারী অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছেন। দেশের নানা প্রান্তেই তাদের কাজ আছে। ফলে পেশাগত কারণেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে।
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের এই ভোটে প্রচার শেষ সপ্তাহে চলে এসেছে। আওয়ামী লীগ এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর দলের ভেতরের লড়াইয়ে প্রচারও জমেছে বিভিন্ন আসনে। তবে যেসব আসনে নৌকাকে মোকাবিলা করার মতো শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই, সেসব আসনে ভোট জমেছে কমই।
খুশী কবিরের কাছে প্রশ্ন ছিল ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে কী ধরনের আলোচনা তিনি জেনেছেন এবং তার চেনাজানাদের মধ্যে কেমন আগ্রহ দেখছেন।
জবাবে তিনি বলেন, ‘এক ধরনের প্রহসন ও একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। কেবল প্রধান বিরোধীদলগুলোর মধ্যে বিএনপি নির্বাচনে আসছে না তা নয়, অনেক ছোটদলও নির্বাচনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, বামপন্থি ও অন্যান্য দলগুলোও অংশ নিচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন হয়ত অনেক প্রার্থী। কিন্তু অনেকে একই দল আওয়ামী লীগের। কেননা আওয়ামী লীগ বলেছে, তুমি স্বতন্ত্র হয়ে প্রার্থী হলেও দলীয় কোনও ব্যবস্থা নেব না। তুমি চাইলে নির্বাচন করতে পার, এমন সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীই একই দলের। ফলে মানুষের আগ্রহও সত্যিকার অর্থে নেই। প্রার্থীর নিজস্ব অবস্থান থাকার কারণে কিছু এলাকায় উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ এলাকায় উৎসাহটা সেভাবে নাই।”
নিজের মতের প্রতিফলন ব্যালটে দেখলেই কেবল জনগণ ভোট দিতে যায় বলে মনে করছেন এই অধিকারকর্মী।
ভোটারদের উৎসাহে ভাটা পড়ার সময়ক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নব্বইয়ের পরে বেশ উৎসাহ দেখা গেছে। নব্বইয়ের নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক, যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি। এরপরের নির্বাচনগুলোতে তাই ছিল। কিন্তু এরপর আস্তে আস্তে কমে যায়। ২০০৮ সালে ভোটারদের উপস্থিতি ভালো ছিল। কিন্তু, এখন ভোট দিয়ে কী হবে, এমন অনাগ্রহ মানুষের মধ্যে। আপনি ভোট দেন, কেননা আপনি বলতে চান, আপনি কাকে দেখতে চান। কিন্তু এখন বিকল্প খুবই কম, কাকে ভোট দেওয়া হবে।’
এভাবে নির্বাচন হলে সংসদে সত্যিকারের বিরোধী দল থাকে না বলেও মত দেন খুশী কবির। বলেন, তখন রাজপথেও সেভাবে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না এবং এ কারণে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনগণ।
অন্য এক প্রশ্নে খুশী কবির বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যতই অভিযোগ হোক, ভোট বর্জন একটি ভুল পদক্ষেপ। ২০১৪ সালের পর এবারও বিএনপি ভোট বর্জন করেছে। দলটির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রকাশ্যেই বলেছেন, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করাটা ভুল হয়েছে।’