রিফাতুন্নবী রিফাত:
যখন তোমার কেউ ছিল না, তখন ছিলাম আমি; এখন তোমার সব হয়েছে, পর হয়েছি আমি কথাগুলো বলছিলাম ছন্দে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন নিয়ে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি, সমাজ পরিবর্তন ও আধুনিকতার ভিড়ে দিন দিন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে।
বৈদ্যুতিক বাতি, চার্জার ও বিদ্যুতের নানা ব্যবহারের ফলে হারিকেনের ব্যবহার আজ আর দেখা যায় না। নতুন প্রজন্ম জানেন না, হারিকেন কী, এটির কাজই-বা কী! তবে প্রবীণদের ভাষ্যমতে, একসময় হারিকেন দেখতে যেতে হবে জাদুঘরে।
গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে একসময় হারিকেনই ছিল একমাত্র আলোর উৎস। আকাশের আলো নিভে গেলেই সন্ধায় হারিকেন নিয়ে পড়তে বসত শিশুরা। বাসগৃহের আলোর সন্ধান, বাজারের দোকানদারি; এমনকি রাতে চলাফেরা করার জন্যও হারিকেন ছিল গ্রামের মানুষের একমাত্র অবলম্বন। তবে এখন প্রযুক্তির ভিড়ে হারিকেন ছেড়ে বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে।
গল্পে গল্পে হারিকেনের কথা বলতেই চমকে যান গাইবান্ধা সদর উপজেলার মাঠেরপাড় গ্রামের বয়োবৃদ্ধা হেনা বেগম (৮৫) বলেন, ‘মুই যখন ছোট আছিলুম, তখন প্রত্যাক সন্ধ্যাবেলাত হ্যারিকেনের কাচের চিকনি খুলি, ধুয়া, মুছি পরিষ্কার করি ক্যারাসিন ত্যাল ঢালি মেচ দিয়া আগুন জ্বালাছোম। আগে হ্যারিকেনের ক্যারাসিন ত্যাল থোয়ার জন্য সবার বাড়িত বাড়িত কাচের বোতলত দড়ি দিয়্যা লাগায় বাঁশের খুঁটিত ঝুলিয়ে রাখা হইতো। এখন কোনটি তার এগল্লা পাবেন। এ দেশ থাকি হ্যারিকেন উঠি গেছে। ’
গাইবান্ধা পৌর এলাকার কলেজপাড়ার বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা ল্যাম্প কিংবা হারিকেনের মৃদু আলো জ্বালিয়ে ছাত্রদের লেখাপড়া করিয়েছি। বাতাসের ঝাপটায় কখনো কখনো আলো নিভে গেছে। আবার কাঠির ম্যাচ অথবা ছাত্র বানসার চুলার আগুনে পাটকাঠি দিয়ে আলো জ্বালিয়ে পড়ালেখা শুরু করাতাম। এখন এসব কিছুই অতীত। সবই স্মৃতি হয়ে আছে আমাদের মাঝে। ’
মাঠেরপাড় এলাকার মুদি দোকানি মালেক মিয়া বলেন, ‘১৫ থেকে ২০ বছর আগে বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় কেরোসিন তেল নেয়ার জন্য মানুষের সিরিয়াল থাকত। গ্রামাঞ্চলের সেই ঐতিহ্যবাহী হারিকেন আজ বিলুপ্তির পথে। এখন পুরো বাজারে মুদির দোকানে কেরোসিন তেল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। ’
সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর এলাকার ৭৬ বছর বয়সি রিকশাচালক কফিল উদ্দিন ছয়দফা ডট নিউজকে বলেন, ‘আমি এখন রিকশা চালাতে পারি না। তবে আজ থেকে ২০ বছর আগেও আমি যখন রিকশা চালাই, তখন হারিকেন ছাড়া রাতে চালানো যেত না। তখন হারিকেন ব্যবহার করতে হতো। আমরা রিকশার নিচে পেডেলের পাশে এটা বসিয়ে রিকশা চালাতাম। ১০-১৫ টাকার কেরোসিন তেল দিয়ে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা চালানো যেত রিকশা। ’