ছয়দফা নিউজ ডেস্ক:
আফ্রিকার দেশ নাইজারে নাটকীয় সেনা অভ্যুত্থানের পর নিজেকে সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন জেনারেল আবদুরাহমানে তচিয়ানি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত বুধবার ওমর তচিয়ানি নামে পরিচিত এই জেনারেলের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্ট গার্ডের সদস্যরা দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজুমকে বন্দি করেন। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতার পর নাইজারের প্রথম শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পরিবর্তনকে ভেঙে দিয়েছে এই সেনা অভ্যুত্থান।
প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজুম এখনও বিদ্রোহী সেনা সদস্যদের হাতে বন্দি। তবে তিনি সুস্থ আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন, পশ্চিম আফ্রিকান আঞ্চলিক ব্লক (ইকোওয়াস), ইইউ এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। নাইজার পশ্চিমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। ২০২০ সালের পর এটি পশ্চিম ও কেন্দ্রীয় আফ্রিকার সপ্তম ক্যুর ঘটনা। এ অঞ্চলের জঙ্গি তৎপরতা ঠেকানো ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে এটাকে বড় আঘাত হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রেসিডেন্টের রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে এই ক্যুর সূত্রপাত ঘটে। সশস্ত্রবাহিনীর কিছু সুনির্দিষ্ট সদস্যকে নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়। জেনারেল ওমর তচিয়ানির নেতৃত্বাধীন এই বাহিনীর মূল দায়িত্ব প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে বুধবার টেলিভিশনে বাজুমকে উৎখাত করার ঘোষণা দেওয়া সেনাদের মধ্যে ছিলেন না জেনারেল ওমর। বৃহস্পতিবার ক্যুর সমর্থকরা রাজধানী নিয়ামেতে ক্ষমতাসীন দলের সদর দফতরে লুটপাট চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। সেনাবাহিনী, রক্ষীবাহিনীর ক্যুর প্রতি সমর্থন জানানোর পর এই ঘটনা ঘটে।
এর আগে, দেশটির জাতীয় সংসদের সামনে অসংখ্য মানুষ জমায়েত হয়। তাদের কেউ কেউ ফ্রান্সবিরোধী স্লোগান দেয় ও রাশিয়ার পতাকা উঁচিয়ে ধরে। এ ঘটনার মাধ্যমে সাবেক ঔপনিবেশিক প্রভু ফ্রান্স ও সাহেল অঞ্চলে তাদের প্রভাবের বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। নাইজার ফ্রান্সের কাছ থেকে ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। নাইজারের সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্স ও পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিক সংগঠন ইকোওয়াস বাজুমকে শিগগির মুক্তি দেওয়া ও সংবিধান অনুযায়ী দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও বলেছেন, দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফেরানো জরুরি।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জানান, ‘গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতা’ বজায় রাখতে নাইজার সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এ ছাড়াও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র জানান, দেশটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের মাধ্যমে নাইজারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেওয়ার পক্ষে।
রাষ্ট্রায়ত্ত টিভিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি প্রচার করা হয়। এতে মন্ত্রণালয় লুটপাট ও ভাঙচুরের নিন্দা করে ও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সমাবেশ ও বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এদিকে চিফ অব স্টাফের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে রক্ষীবাহিনীর অভ্যুত্থানের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানায় সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী জানায়, তাদের প্রাধান্য হচ্ছে দেশকে অস্থিতিশীল হওয়া থেকে রক্ষা করা এবং প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা।
সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের প্রতি সমর্থন জানানোর পর বৃহস্পতিবার রাজধানী নিয়ামেইতে ক্ষমতাসীন দলের সদর দফতরগুলোতে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয় অভ্যুত্থানের সমর্থকরা। এর আগে এই সমর্থকরা দেশটির জাতীয় পরিষদের সামনে জড়ো হয়ে রাশিয়ার পতাকা দুলিয়েছিল এবং ফ্রান্সবিরোধী স্লোগান দিয়েছিল।
আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের প্রভাব নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২০ ও ২০২২ সালে যথাক্রমে মালি ও বুরকিনা ফাসোর ক্ষমতা গ্রহণকারী জান্তা ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে মিত্রতা ছিন্ন করে রশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে।
লাখো মানুষের খাবার প্রয়োজন : ওসিএইচএর মতে, নাইজারে ২০১৭ সালে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল ১৯ লাখ মানুষের। ২০২৩ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখে। দেশটিতে ৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অথচ এই দেশটি নাইজেরিয়া, মালি এবং বুরকিনা ফাসোর আড়াই লাখের বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।
জাতিসংঘের এজেন্সি জানিয়েছে, নাইজারে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ তীব্রভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। জুন থেকে আগস্টে এই সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির জন্য জাতিসংঘের ৫৮৪ মিলিয়ন ডলারের মানবিক প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা করেছে। এ পর্যন্ত তার কেবল ৩২ শতাংশ অর্থায়ন হয়েছে।