ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে ভারতীয় ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দিল্লিকে সাজানো হয়েছে জমকালো দরবারি মেজাজে। ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ২ দিনের ওই সম্মেলনকে সামনে রেখে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দিল্লিতে যেতে শুরু করেছেন। সম্মেলনে যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মতো বিশ্বনেতারা। ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে রাষ্ট্রনেতাদের স্বাগত জানাতে কোনো খামতি রাখছে না কেন্দ্রীয় সরকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সম্মেলনকে সামনে রেখে নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি বোলা আহমেদ তিনুবু ইতিমধ্যেই ভারতে পৌঁছেছেন। প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এসপি সিং বাঘেল বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। এদিকে কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় আজ ভারতে যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, তিনি সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করবেন। জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া আমেরিকার সব প্রতিনিধির এদেশ সফরের আগে কোভিড পরীক্ষা করানো হচ্ছে। সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বাইডেন।
দেয়ালে দেয়ালে ইতিহাস : জি ২০ সম্মেলন উপলক্ষে দিল্লির দেয়ালে দেয়ালে নিজেদের ইতিহাস তুলে ধরছেন পথশিল্পীরা। পৌরাণিক কাহিনি ও নৃত্যের ধরনগুলো জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে রংতুলিতে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য দেশটির শহরের দেয়ালগুলোকে আরও সৃজনশীল ও প্রাণবন্ত করে তুলতে দিল্লির নাগরিক সংস্থাগুলো স্থানীয় শিল্পীদের নিয়োগ করেছে। মাস দুয়েক আগে থেকেই কাজ শুরু করেন পথশিল্পীরা। জনপ্রিয় ভারতীয় স্মৃতিস্তম্ভ থেকে শুরু করে ময়ূর, গাছ, পদ্ম, গরু, মাছ, হরিণের চিত্র আঁকা হয়েছে। কীর্তিমান ব্যক্তিত্বসহ তুলে ধরা হয়েছে রেলগাড়ির ছবি। ঐতিহ্যবাহী শিল্পশৈলীতে উঠে আসে দেবতাদেরও ছবি। শুধু পৌরাণিকই নয়, আধুনিক ভারতের সৌন্দর্যও তুলে ধরা হয় চমৎকারভাবে।
সম্মেলনের লোগো পদ্ম : সম্মেলনের লোগো হিসেবে পদ্ম ফুলের প্রতীককে বেছে নিয়েছে ভারত। নিছক কোনো উদ্দেশ্যে পদ্মকে বেছে নেওয়া হয়নি। ভারতের জাতীয় পতাকার প্রাণবন্ত রং জাফরান, সাদা, সবুজ ও নীলের সঙ্গে পদ্ম ফুলের আছে দারুণ মিল। গত বছরের ৮ নভেম্বর পদ্মকে সম্মেলনের লোগো হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
৫০০ পুরাকীর্তির প্রদর্শনী : সম্মেলনে ৫০০ পুরাকীর্তি দেখাবে নয়া দিল্লি। শনিবার পুরাকীর্তি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতাদের পত্নীরা। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘শিকড় ও গন্তব্য : অতীত, বর্তমান ও চলমান’ এই শিরোনামে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। পুরাকীর্তি প্রদর্শনীর আয়োজনে আছে দিল্লিতে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম আধুনিক শিল্প জাদুঘর ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট (এনজিএমএ)। ১২ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল : ভারতে আসন্ন জি-২০ সম্মেলনকে ঘিরে বন্ধ থাকবে কিছু মেট্রো স্টেশন। এ প্রেক্ষিতে সোমবার একটি পরামর্শ জারি করেছে দিল্লি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। পরামর্শে বলা হয়, শুধু ভিভিআইপি অতিথিদের আগমনের সময় কয়েকটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ থাকবে। নির্দিষ্ট গেট ছাড়া অন্যান্য জায়গায় মেট্রোর চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে উল্লেখ করা হয় এতে।
১২০০ এলইডি প্যানেল : সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ১২০০ ছোট এলইডি প্যানেল স্থাপন করেছে নয়া দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিল (এনডিএমসি)। পুনর্গঠন করেছে ২৫০টি বৈদ্যুতিক বাক্স। বৃহস্পতিবার এনডিএমসির ভাইস চেয়ারম্যান সতীশ উপাধ্যায় বলেন, শহরে নান্দনিক আনন্দদায়ক এক পরিবেশ তৈরিতে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি শুধু শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি নয় বরং জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অবদান রাখবে একটি অর্থবহ উপায়ে। বৈদ্যুতিক বাক্সগুলো এখন সৃজনশীলতা আর সংস্কৃতির প্রাণবন্ত প্রদর্শন।
চোখধাঁধানো এই এলইডি প্যানেলগুলো কোনো সাধারণ স্থাপনা নয় বলে জানান সতীশ উপাধ্যায়। প্যানেলগুলো ভারতীয় সংস্কৃতি, প্রাণী, বিভিন্ন শিল্পকর্ম চিত্রিত বার্তা, ছবি ও ফটোগ্রাফ দিয়ে সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া জি-২০ সম্মেলনের লোগো প্রদর্শন করা হবে এতে।
আতিথ্য ও অপরের সংস্কৃতি : দিল্লির বুকে বিভিন্ন জায়গায় অতিথিদের স্বাগত জানাতে পোস্টার-হোর্ডিং লাগানো হয়েছে। সেখানে ভারতের মন্ত্র ‘বসুদেব কুটুম্বকম’ স্থান পেয়েছে, যার অর্থ গোটা পৃথিবী আমাদের অতিথি। ফেলে দেওয়া বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দিয়েও অসাধারণ শিল্পকলা তৈরি করা হয়েছে, যা ভারতের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত। যেমন পিতলের টুকরো দিয়ে বানানো এই ময়ূর, যা ভারতের জাতীয় পাখি। শুধু ভারতেরই নয়। আমন্ত্রিত দেশগুলোর জন্য এই বিশেষ শিল্পকলা তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য বানানো হয়েছে ম্যাগপাই পাখি, যা তাদের জাতীয় পাখি। একইভাবে আর্জেন্টিনার জন্য বানানো হয়েছে পুমা। এ ছাড়াও রাস্তার ধারগুলোতে ফুলের গাছ বসিয়ে সৌন্দর্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রূপোর থালায় খাবার পরিবেশন : সম্মেলনে যোগদানকারী রাষ্ট্রপ্রধান এবং অন্যান্য বিশ্বনেতাদের ভারতের সাংস্কৃতিক শিল্পকর্মের ছাপ সংবলিত বিশেষ রূপোর পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হবে। জয়পুরের একটি ধাতব পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থা এই তথ্য দিয়েছে। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের ওই মেটালওয়্যার কোম্পানি জানিয়েছে, এখানে এ-২০ সম্মেলনে যোগদানকারী রাষ্ট্রপ্রধান এবং অন্যান্য বিশ্বনেতাদের ভারতের বিশেষ রূপোর পাত্রে খাবার দেওয়া হবে।