পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

গার্মেন্টসে নিয়োগ বন্ধ

কারখানা মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বিজিএমইএ’র সিদ্ধান্ত

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
দেশের গার্মেন্টস শিল্পে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ করলো মালিকরা। সাম্প্রতিকা কালের শ্রমিক অসন্তোষ, কারখানায় কাজ বন্ধ থাকা, শ্রমিক-কর্মচারীদের মারধর করা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর এবং মামলা-লুটপাটের প্রেক্ষিতে গার্মেন্টস শিল্প মালিকরা এ সিদ্ধান্ত নেন। সেই সঙ্গে কোভিড পরিবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সর্বশেষ ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে পোশাকের রফতানি আদেশ কমে যাওয়াকেও অপর কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) কার্যালয়ে গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে মাঝ রাতে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান। এ সময় বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী এমপি, বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচিসহ সকল সহ-সভাপতিবৃন্দ ও পরিচালকবৃন্দ।

সভায় মূলত চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গার্মেন্টস কারখানায় নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ না দেওয়া। এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এখন থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত সকল পোশাক শিল্প কারখানাতে সকল ধরণের নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকবে। প্রতিটি কারখানার গেইটে ‘নিয়োগ বন্ধ’ কথাটি লিখে ব্যানার টাঙিয়ে দিতে হবে।’

দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটি হলো-‘যেসকল কারখানায় অগ্নি-সংযোগ, ভাঙচুর বা মারামারির ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, সে সকল কারখানা কর্তপক্ষকে নিকটস্থ থানায় প্রমাণস্বরূপ ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সহকারে মামলা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম জানা না থাকলে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে মামলা করা যাবে। মালা করার সঙ্গে সঙ্গে তার একটি কপি বিজিএমইএ’র সিনিয়র অতিরিক্ত সচিব মেজর মো. সাইফুল ইসলামের কাছে পাঠাতে হবে।’

শিল্প মালিকদের পক্ষ থেতে নেওয়া তৃতীয় সিদ্ধান্তটি হলো-‘যেসকল কারখানার শ্রমিক কারখানায় প্রবেশ করে কাজ করা থেকে বিরত থাকবে বা কারখানা ছেড়ে বেরিয়ে যাবে সে সকল কারখানার মালিক বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ১৩ (১)-এর বিধানমতে কারখানা বন্ধ করে দেবেন।’

সবশেষ যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতেল বলা হয়েছে-‘যে সকল কারখানায় অগ্নি-সংযোগ, ভাঙচুর বা মারামারির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সে সকল ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিজিএমইএ’র বিনিয়র সিসটেম এনালিস্ট মো. জাকারিয়ার কাছে পাঠাতে হবে।’

সবশেষে এ সকল সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মানতে সকল গার্মেন্টস মালিকের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। এদিকে বিজিএমইএ বা গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। এ সিদ্ধান্তকে অমানবিকও বলছেন তারা। এ বিষয়ে শ্রমিক নেত্রী জলি তালুকদার সময়ের আলোকে বলেন, ‘গার্মেন্টস কারখানায় নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা আমি তার তীব্র নিন্দা জানায় ও প্রতিবাদ জানায়। একই সঙ্গে এ ধরণের সিদ্ধান্তকে আমি অমানবিক বলে মনে করছি। কারণ, যে শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামে তৈরি করা পোশাক বিক্রি করে দেশে ডলার আসে সেই শ্রমিকরাই যদি চাকরি না পায় তাহলে তো তাদের পেটে লাথি মারা হবে। তার চেয়ে বড় কথা হলো- যখন সাড়ে ১২ হাজার মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে এবং এ মজুরি প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা যখন আন্দোলন করছে, তখন এ ধরণের সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের আরো অসান্ত করে তুলবে। এর দায়-দায়িত্ব শিল্প মালিকদের নিতে হবে। সুতরাং আমি বিজিএমইএ ও শিল্প মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানাবো-আপনারা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন।’

আরেক শ্রমিক নেতা ও এবারের মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘গার্মেন্টস মালিকদের এটা আবার কেমন সিদ্ধান্ত। শ্রমিক নিয়োগ না দিলে তারা কারখানা চালাবে কি করে। যদিও বিষয়টি মাত্র আপনার কাছ থেকে শুনলাম-এখনো বিস্তারিত জানি না। আমরা দেখি দুই একদিন পর্যবেক্ষণ করি, মালিকরা আসলে কি কারণে এ সিদ্ধান্ত নিলো। কি তাদের উদ্দেশ্য-আমরা বুঝে তারপর আরো কথা বলবো।’

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ বৈঠক শেষে বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা শ্রম মন্ত্রণলায়ে যান। কারণ বৈঠকে তারা মজুরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। পরে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দফতরে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এসে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা দেন। তিনি এস সময় আরো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেকই এ মজুরি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মজুরি ঘোষণার কয়েক দিন আগে থেকে এবং মজুরি ঘোষণার পর থেকেও গাজিপুর, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা আন্দোলন করেন। তারা এ মজুরি প্রত্যাখ্যান করে ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা দাবি করেন।

কয়েক দিনের আন্দোলনের কারখানায় হামলা-ভাংচুর হয়। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন শ্রমিকও নিহত হন। এই উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই গতকাল রাতে শিল্প মালিকরা কারখানায় নতুন নিয়োগ বন্ধের ঘোষণা দেন।

তথ্যসূত্রঃসময়ের আলো

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ