ছয় দফা নিউজ ডেস্ক: পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে অসীম শূন্যে ডানা মেলার জন্য বিজ্ঞানিরা শুরু করেন কঠোর গবেষণা। মানুষ স্বপ্ন দেখে আকাশ ছাড়িয়ে মহাশূন্যে যাওয়ার। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয় বিভিন্ন দেশ। মানুষ তখনও পৃথিবীর কক্ষপথ পরিভ্রমণ করেনি, পাড়ি জমাননি চাঁদের বুকে। মহাকাশ যাত্রায় মানুষ তখন সবেমাত্র হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোচ্ছে। এমন অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে তো আর রকেটে উঠিয়ে দেয়া যায় না। কারণ বিজ্ঞানিরা জানেন না মহাশূন্যের ভরশূন্য পরিবেশে, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে মানবদেহ কেমন আচরণ করবে? বায়ুমন্ডল ত্যাগ করার সময়ই বা প্রাণীর শরীরে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে তাও অজানা। সমাধান খুঁজতে বিজ্ঞানিরা বেছে নিলেন আদিম উপায়। পোষা প্রাণীকে পাঠালেন মহাকাশে।
১. বানর:
অ্যালবার্ট
১৯৪৮ সাল। আলবার্ট নামের একটি পুরুষ বানরকে ভি-২ রকেটে করে ছুড়ে দেয়া হয় মহাকাশ বরাবর। প্রথম স্তন্যপায়ী হিসেবে মহাকাশ অভিযানের কৃতিত্ব আলবার্টেরই। রকেটটি ভুপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার উপরে উঠতে সমর্থ হয়। তবে আলবার্ট সম্ভবত উৎক্ষেপণের সময়েই অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। পরের বছর জুনে মার্কিন বিজ্ঞানিরা আবার চেষ্টা করেন আরেকটি বানর দিয়ে। এর নাম দ্বিতীয় আলবার্ট। ১৩৩ কিলোমিটার উপরে গিয়ে দ্বিতীয় আলবার্ট মহাশূন্য ভ্রমণ করে আসলেও ফেরার পথে তার বাহনের প্যারাসুট কাজ না করায় তীব্র বেগে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে আলবার্ট।
২. ইঁদুর
ইঁদুর
১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানিরা ইঁদুরকে মহাকাশে পাঠাতে চেষ্টা করেন। ১৩৭ কিলোমিটার উপরে উঠতে পারলেও দুর্ভাগ্যবশত ফিরতি পথে প্যারাসুট কাজ না করলে দ্বিতীয় আলবার্টের ভাগ্য বরণ করতে হয় ইঁদুরটিকে। ৩১ আগস্ট আরেকটি ইঁদুর প্রেরণ করা হয়। কিন্তু এবারো একই সমস্যায় অভিযান ব্যর্থ। বিজ্ঞানিরা হাল না ছেড়ে ইঁদুর দিয়েই চেষ্টা চালিয়ে যান। অবশেষে ১৯৬০ সালের ১৯ আগস্ট সফলভাবে উৎক্ষিপ্ত ৪৪টি ইঁদুর জীবিত অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরে আসতে সক্ষম হন। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা থেকে মহাকাশের পরিবেশে মানুষকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে তার বিস্তারিত বিশ্লেষণ সম্ভব হয়েছিল।
৩. কুকুর
সাইগান এবং ডেজিক
মহাকাশযাত্রী পশুর নাম বললে প্রথমেই মাথায় আসে লাইকার কথা। তবে লাইকার আগে মহাকাশ পরিভ্রমণ করেছিল সাইগান এবং ডেজিক নামে আরো দুটি কুকুর। ১৯৫১ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দুই কুকুর মহাকাশের নিকষ আঁধারে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। তবে তারা পৃথিবীর কক্ষপথে ভ্রমণ করেনি। কুকুর দুটি নিরাপদে ভূপৃষ্ঠে ফিরে এসেছিল। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় অভিযানের সময় ডেজিক মারা যায়।
লাইকা
এর ৬ বছর পর ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর মহাকাশে পাঠানো হয় লাইকাকে। দাবি করা হয়- সোভিয়েত ইউনিয়নের রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া এই কুকুর প্রথম প্রাণী যে সফলভাবে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিভ্রমণ করে। তবে জীবিত ফেরা হয়নি লাইকার। অভিযোগ- মাত্র সাতদিনের অক্সিজেন আর একদিনের খাবার দিয়ে লাইকাকে রকেটে তুলে দেয়া হয়েছিল। সোভিয়েতের গবেষকদের দাবি, লাইকা সাতদিন বেঁচে ছিল, অন্যদিকে সমালোচকরা বলে থাকেন লাইকা সম্ভবত উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। সে যাই হোক না কেন লাইকা পৃথিবীর কক্ষপথে ভ্রমণ করা সর্বপ্রথম মহাকাশচারী।
বেল্কা আর স্ট্রেল্কা
লাইকার পর ১৯৬০ সালের ১৯ আগস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক-৫ এ করে বেল্কা আর স্ট্রেল্কা নামে আরো দুটি কুকুরকে মহাকাশে পাঠায়। তারা লাইকার চেয়ে ভাগ্যবান ছিল। পৃথিবীর কক্ষপথ ঘুরে প্রথম কুকুর হিসেবে এরা নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়।
৪. বিড়াল:
ফেসিলেট
১৯৬০ সালের পর অন্যান্য দেশও মহাকাশ নিয়ে গবেষণা চালাতে শুরু করে। ১৯৬৩ সালের ১৮ অক্টোবর ফেলিসেট নামে একটি বিড়াল মহাকাশে পাঠিয়ে ফরাসিরা জ্যোর্তিবিজ্ঞানের জগতে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়। এই যাত্রায় ফেলিসেট জীবিত ফিরে আসে।