পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪

কেঁচো সার উৎপাদনে ফিরেছে স্বচ্ছলতা

এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়:
পঞ্চগড়ে কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন নাজমা-ফজলুল দম্পতি। অভাব-দারিদ্রতা কাটিয়ে অর্থ সচ্ছলতায় ফিরেছেন তারা। তাদের দেখাদেখি আশপাশে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ সার উৎপাদন করে বাড়তি আয়ের পথ তৈরি করেছেন অনেকে। প্রথম দিকে এ সারের পরিচিতি না পেলেও নিজের জমিতে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বেড়েছে কেঁচো সারের চাহিদা।

জেলার সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের ঘটবর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কেঁচো সার উৎপাদনে সফল কৃষক এ গ্রামের ফজলুল হক। তার স্ত্রী নাজমা বেগমসহ পাঁচ বছর আগে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কৃষক সমিতি লিমিটেডের উদ্যোগে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের মাধ্যমে কেঁচো সার উৎপাদনের উপর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে এসে ৪টি রিং স্লাব দিয়ে ছোট পরিসরে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন কার্যক্রম। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পরিধি। এখন ৪টি রিং স্লাব থেকে ৪০টিতে উৎপাদন হচ্ছে এই জৈব সার।

সার পদ্ধতিতে দেখা যায়, প্রতিটি রিংয়ে ১শ কেজি গোবর, বিভিন্ন শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ ও কলাগাছের টুকরো মিশ্রন করে দুই কেজি কেঁচো দেয়া হয়েছে। চটের বস্তা দিয়ে রিংগুলো ঢেকে দেয়া হয়েছে। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরি হয় ভার্মি পোস্ট বা কেঁচো সার।

কৃষক ফজলুল হক বলেন, আমি সামান্য একজন ক্ষুদ্র চাষি। তিন-চার বিঘা জমি আবাদ করি। কৃষি অফিসে নিয়মিত যাওয়া আসায় করার কারণে সেখানে কেঁচো সারের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারি । এ সার চাষ করতে আগ্রহী হয়ে প্রথমে ৪টি রিং স্লাব দিয়ে কাজ শুরু করি। এখন আমার ৪০টি রিং স্লাবে সার উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিটি রিং স্লাব থেকে ৯০-১০০ কেজি কেঁচো সার উৎপাদন করা যায়। প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি করি।

সারের পাশাপাশি কেঁচোও বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি কেঁচো বিক্রি করেন ১ হাজার ২শ টাকা। এতে করে প্রতি মাসে সার ও কেঁচো বিক্রি করে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতে আসছে। এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা এসে এখান থেকে সার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন বাজারে গিয়েও এ সার বিক্রি করা হচ্ছে।

স্ত্রী নাজমা খাতুন বলেন, আমি ঘটবর সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এ সংগঠনের উদ্যোগে কৃষি অফিস থেকে আমরা প্রশিক্ষণ নিয়ে কেঁচো সার উৎপাদনে কাজ শুরু করি। এ সংগঠনের সদস্যরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে তারাও এ সার উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আর আমি ও আমার স্বামী মিলে কাজ করে অভাব দৈন্যতা পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে বেশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছি। এখন ভালো চলছি, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছি। এ সার যেমন দামেও সস্তা আর কোন ক্ষতিকর দিক না থাকায় এ সার ব্যবহার করলে মাটিকে রাখে সতেজ, তাজা ও উর্বরতা বৃদ্ধি করে। দিনদিন কৃষকদের কাছে এ সারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রতিবেশি লীলারানী-নয়ন চন্দ্র রায় দম্পতিসহ কৃষক আব্দুর রহমান, নিয়ামত আলী উদ্বুদ্ধ হয়ে তারাও কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। তারা জানান, আমরা ফজলুল ভাইয়ের দেখাদেখি ভার্মি পোস্ট তথা কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজেদের জমিতে ব্যবহার করছি, এখান থেকে যা অতিরিক্ত থাকে তা বিক্রি করে আয়ও করছি। এটা দিয়ে সংসারে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচটাও হচ্ছে। এ সার মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ফসল ভালো উৎপাদন হয়।

কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়ন উপ-সহকারী হরি নারায়ন রায় বলেন, আমার কর্ম এলাকায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে কেঁচো সার উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করেছি। তারা সফলভাবে এ সার উৎপাদন করতেছে। এ উৎপাদিত সার তারা নিজেরা ব্যবহার করতেছে, পাশাপাশি উদ্বৃত্ত সার বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। আর আশেপাশের কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে তারাও এ সার আশেপাশে কৃষকের কাছে বিক্রি করছে। সেই সাথে আমাদের উপর যে রাসায়নিক সারের একটা চাপ রয়েছে তা হ্রাস পাচ্ছে। কেঁচো দিয়ে পরিবেশবান্ধব কম্পোস্ট উৎপাদনে কৃষি অফিস কৃষকদের যাবতীয় উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শাহ আলম মিয়া বলেন, পঞ্চগড় জেলায় ৪১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে। তার মধ্যে ৮৫০ মেট্রিক টন কেঁচো সার তথা ভার্মি পোস্ট। দিন দিন এর পরিধি বাড়ছে। এই সার উৎপাদনে কৃষি বিভাগ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছে। কৃষকরা এ সার ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে। এবং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক যারা কৃষক, তারা নিজেরা জৈব সার যেমন ব্যবহার করছে, তেমনি সার বিক্রি করে বিক্রি করে দু’পয়সা আয় করছে। এটা দিয়ে তারা সুখ শান্তিতে সংসার চালাচ্ছে। বিশেষ করে কেঁচো সার ব্যবহার করলে সবজি ও ফল চাষের ক্ষেত্রে এ সারের গুরুত্ব রয়েছে। ফল ও ফসলের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য কেঁচো সারের ভূমিকা অপরিসীম। এ সারের যত ব্যবহার বাড়বে ততই ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে আসবে।

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ