ছয়দফা নিউজ ডেস্ক:
সূর্যের উদ্দেশ্যে সফলভাবে রকেট উৎক্ষেপণ করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করে ইতিহাস তৈরি করার কিছুদিন পরেই নিজেদের ইতিহাসের প্রথম সৌর মিশনেরও সফল সূচনা করল সংস্থাটি।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সময় ১১টা ৫০ মিনিটে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে পিএসএলভি এক্সএল সি-৫৭ রকেটের মাধ্যমে আদিত্য এল-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ করা হয়। খবর বিবিসি’র
পৃথিবী থেকে ১.৫ মিলিয়ন কিমি (৯৩২,০০০ মাইল) দূরে অবস্থিত ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে যাবে আদিত্য এল-১। এই দূরত্ব অতিক্রম করতে মহাকাশযানটির চার মাস সময় লাগবে।
পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার। কিন্তু এই দু’য়ের মধ্যে এমন একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে পৃথিবী ও সূর্যের মাধ্যাকর্ষণের টান সমান। এটিকেই বলা হয় ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট।
এই ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টকে সূর্যের পথে যাওয়ার মাঝে একটি পার্কিং স্পটও বলা হয়। আদিত্য-এল ১ একবার এই ‘পার্কিং স্পটে’ পৌঁছে গেলে, এটি পৃথিবীর মতো একই গতিতে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সক্ষম হবে।
যেহেতু এই পয়েন্টে পৃথিবী ও সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একে অপরকে বাতিল করে দেয়, ফলে এখানে যেকোনো বস্তু স্থির অবস্থায় থাকতে সক্ষম। এই সুবিধাজনক অবস্থান থেকে সূর্যকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করবে যানটি। এমনকি সূর্যগ্রহণের সময়ও সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে।
ভারতের প্রথম সৌর মিশনের স্যাটেলাইটটির নামকরণ করা হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সূর্য দেবতা আদিত্যের নামে। এছাড়া এল-১ এর এল দ্বারা ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট বোঝানো হয়েছে।
এই সৌর মিশন সফল হলে, সূর্য নিয়ে গবেষণারত দেশগুলোর অভিজাত দলে যোগ দেবে ভারত। তবে এই সৌর মিশনে ব্যয়ের পরিমান সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি ইসরো। ভারতীয় গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মিশনে প্রায় ৩.৭৮ বিলিয়ন রুপি খরচ হয়েছে।
ইসরোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, স্যাটেলাইটটির সাতটি পে-লোড রয়েছে যা সূর্যের সবচেয়ে বাইরের স্তর করোনা এবং ক্রোমোস্ফিয়ার (প্লাজমার একটি পাতলা স্তর যা ফটোস্ফিয়ার এবং করোনার মধ্যে থাকে) পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়ন করবে।
মূলত, সূর্যের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে আদিত্য। ৫ বছর ধরে সূর্যের ওপর নানা পরীক্ষা চালাবে স্যাটেলাইটটি। সংগৃহীত তথ্য বিজ্ঞানীদের সৌর ক্রিয়াকলাপ যেমন ক্রমাগত বিকিরণ, তাপ এবং কণা ও চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রবাহের মাধ্যমে সূর্য কীভাবে পৃথিবী ও মহাকাশের আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে, সে বিষয়ে বুঝতে সাহায্য করবে। সৌর বায়ু ও সৌর অগ্নুৎপাত সম্পর্কে আগে থেকে পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হলে মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটগুলো নিরাপদ কোথাও সরিয়ে নেওয়া যাবে।
বর্তমানে মহাকাশে ভারতের ৫০টিরও বেশি স্যাটেলাইট রয়েছে। এই স্যাটেলাইটগুলো দেশটিকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা যেমন- যোগাযোগের সংযোগ, আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য এবং কীটপতঙ্গের উপদ্রব, খরা এবং আসন্ন দুর্যোগের পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর আউটার স্পেস অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওওএসএ) অনুসারে, পৃথিবীর কক্ষপথে প্রায় ১০,২৯০টি স্যাটেলাইট রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭,৮০০টি স্যাটেলাইট কার্যকর।
এর আগে, সৌর শিখা অধ্যয়ন করার জন্য ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম সৌর অভিযান পরিচালনা করেছিল জাপান। ১৯৯৫ সালে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে একটি সৌর অভিযান পরিচালনা করে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে পার্কার সোলার প্রোব নামের একটি মহাকাশযান সূর্যের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছে নাসা।