পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

পয়োবর্জ্য পরিশোধনে কমছে নদী দূষণ, বাড়ছে জীববৈচিত্র

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দাশেরকান্দি একক পয়োশোধনাগারে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন লিটার পয়োবর্জ্য শোধন করা যাচ্ছে। ফলে শোধনাগার সংলগ্ন গজারিয়া খাল এবং পার্শ্ববর্তী বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণ কমতে শুরু করেছে। পানিতে দুর্গন্ধ ও ক্ষতিকর উপাদান কমতে থাকায় ফিরছে পরিবেশের ভারসাম্য, বাড়ছে জীববৈচিত্র। ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধানে হাইড্রো চায়না করপোরেশন দাশেরকান্দি স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ডিএসিটপি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ডিএসটিপির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। চীনা টেকনিক্যাল টিমের সহযোগিতায় ঢাকা ওয়াসা বর্তমানে এসটিপি অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আজ রবিবার (২৮ এপ্রিল) দাশেরকান্দি স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি সংবাদকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। এ সময় চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ড ঝাং শিয়ালং, ঢাকা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মস্তাফিজুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও ডিএসটিপির সাবেক প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. মহসিন আলী মিয়া, উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মোমতাজুর রহমান, প্রকল্প ব্যবস্থাপক রেন রউকিসহ ঢাকা ওয়াসা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাইড্রো চায়না করপোরেশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের পাগলা, ঢাকার রায়েরবাজার, মিরপুর ও উত্তরায় আরো চারটি আধুনিক পয়োশোধনাগার ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এগুলো নির্মিত হলে নদীর দূষণ অনেক কমে যাবে। ফলে নদীর পানি পরিশোধন করে আরো বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

ঢাকা ওয়াসা কর্মকর্তারা জানান, দাশেরকান্দি এসটিপিতে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, মহাখালী, ডিওএইচএস, তেজগাঁও, নিকেতন, বাড্ডা, রমনা, ইস্কাটন, নয়াটোলা, মগবাজার, ওয়্যারলেস, মৌচাক, আউটার সার্কুলার রোড, মহানগর হাউজিং, হাতিরঝিল, কলাবাগান ও ধানমণ্ডি (আংশিক) এলাকা থেকে আসা পয়োপ্রক্রিয়াকরণ করে পরিশোধিত পানি সংলগ্ন গজারিয়া খালের মাধ্যমে বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মোমতাজুর রহমান বলেন, ‘পয়োপরিশোধনের ফলে নদীতে দূষণ যেমন কমতে শুরু করেছে। ফলে বিভিন্নভাবে আমরা উপকৃত হচ্ছি। যেমন- সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২ এর ইনটেক পয়েন্টে শীতলক্ষ্যা নদীর পানির দূষণ কমেছে। ফলে পানি পরিশোধনে ৬০% কেমিক্যাল খরচ কম হচ্ছে। গজারিয়া খালে, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতে আগে যে দুর্গন্ধ ছিল এখন তা অনেক কমেছে।


ডিএসটিপির সাবেক প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. মহসিন আলী মিয়া বলেন, ‘এসব খাল-নদীতে এখন আমরা মাছ ধরতে দেখি। যা আগে দেখা যায়নি। এর কারণ হলো আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি পানিতে অ্যামোনিয়ার মাত্রা অনেক কমেছে। অ্যামোনিয়া হলো এমন একটি ক্ষতিকারক উপাদান যা জীববৈচিত্র নষ্ট করে।’

কর্মকর্তারা জানান, পয়োশোধনের ফলে উৎপন্ন কর্দমাক্ত ময়লা পুড়িয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০টন ছাই উৎপাদিত হচ্ছে, যা সিমেন্ট কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ছাই সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি-না তাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রতিদিন যে ২ হাজার মিলিয়ন লিটার বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শোধন করতে পারছে দাশেরকান্দি প্ল্যান্ট।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ একর জমির ওপর দাশেরকান্দি এসটিপি বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এসেছে ১ হাজার ১০৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ঢাকা ওয়াসা থেকে এসেছে ১০ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে এসেছে ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ১ জুলাই চীনের অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের রূপরেখা অনুযায়ী, রামপুরা সেতুর পশ্চিম পাশে একটি বর্জ্য উত্তোলন স্টেশন, রামপুরা থেকে আফতাবনগর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ট্রাংক সুয়ারেজ লাইন ও দাশেরকান্দি প্ল্যান্ট এবং দাশেরকান্দিতে প্রধান শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃকালের কণ্ঠ

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ