ছয় দফা নিউজ ডেস্ক: একাত্তরের হানাদার বাহিনীর দোসররা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেকটা নির্বাচনের আগেই চক্রান্ত হয়। এখন তাদের নানা রকমের চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তবে বিশ্বাস করি, মানুষের শক্তি বড় শক্তি। সেই শক্তি আছে বলেই আমরা একটানা তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। হানাদার বাহিনীর দোসরদের প্রেতাত্মারা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে; হত্যার পরিকল্পনা করছে।’ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান নুজহাত চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ প্রমুখ।
টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে হেয় চোখে দেখা হতো, পাকিস্তানিরা বোঝা মনে করে বলত, এটা চলে গেলেই ভালো। আজকে তারা বলে, আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। আমরা বাংলাদেশের মতো উন্নত হতে চাই। আর যারা বলেছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, তারা দেখে বাঙালিকে তো দাবায় রাখা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে মানুষ বিদেশে গেলে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান পায়। আর এ সম্মানটা দিতে পারে না আমাদের দেশের কিছু কুলাঙ্গার। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল যারা, এরাই তাদের প্রেতাত্মা হয়ে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে হত্যা করে যাচ্ছে। হত্যার পরিকল্পনা করছে।’
আওয়ামী লীগের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। তারা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে; তারা শান্তিতে বাস করবে, উন্নত জীবন পাবে এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ দেশকে আর কখনো পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দেব না। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলবে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।’
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সংসদে বসালেন। আর ঘোষণা দিলেন দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। খুনিদের যখন সংসদে বসিয়েছেন, ওই সংসদে খালেদা জিয়া বেশি দিন বসতে পারেনি। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করল, আর ৩০ মার্চ জনগণের রুদ্ররোষে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। নাকে খত দিয়ে পদত্যাগ করে তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। এ কথাটা বিএনপি নেতাদের মনে রাখা উচিত যে ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া বিদায় নিয়েছিল।’
জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে বাস আছে, রেললাইন আছে, যেখানে এ রকম ঘটনা ঘটবে, সঙ্গে সঙ্গে জনগণ যদি মাঠে নামে এরা হালে পানি পাবে না। এরা ধ্বংস করতে পারে, এরা মানুষের জন্য সৃষ্টি করতে পারে না। এরা মানুষ খুন করতে পারে, কিন্তু মানুষের জীবনের শান্তি-নিরাপত্তা দিতে পারে না। এরা মানুষের সর্বনাশ করতে পারে, মানুষের জীবনটা উন্নত করতে পারে না। কাজেই তাদের কাছ থেকে সাবধান। আর কোথাও যদি এ ধরনের রেলের স্লিপার তুলে ফেলে, আগুন দেয়, যখনই করতে যাবে সরাসরি তাদের ধরতে হবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রেললাইন থেকে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যা করবে, এরা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে কোন মুখে? হত্যাকারীরা কখনো গণতন্ত্র দিতে পারে না। এটা দেশের মানুষকে বুঝতে হবে।’
সারা দেশে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের আন্দোলন কী? বলছে অবরোধ, হরতাল। কিন্তু তাদের দেখা নেই। কয়েকটা গাড়ি পোড়ানো, মানুষ পোড়ানো, রেললাইন কেটে দেয়া, বাস পোড়ানো এটাই হচ্ছে তাদের হরতাল-আন্দোলন।’
এর আগে এদিন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে দলের নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে শহীদ বেদিতে আরো একটি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। তখন তিনি শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেখানেও তিনি দলীয় প্রধান হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আরেকটি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।