ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা আজ রোববার। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে মহাঅষ্টমীর দিনে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সব নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার লক্ষ্য। আজ সকালে নির্দিষ্ট কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হবে। ফুলের মালা, চন্দন ও নানান অলংকার-প্রসাধন উপাচারে নিপুণ সাজে সাজানো হবে কুমারীকে।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকানুযায়ী আজ সকাল ৯ টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহাষ্টম্যাদি বিহিত পূজা শুরু হবে। বেলা ১১টায় মহাষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধিপূজা ৫ টা২৪ থেকে ৬.১২ মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার ছিল মহাসপ্তমী। সকালে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। সপ্তমী পূজা উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন মণ্ডপে ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, রামায়ণ পালাসহ নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল ৯টা ৫০ মিনিট থেকে রাত ৭ টা ৫১ পর্যন্ত দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীসহ সারা দেশে হিন্দু-ধর্মাবলম্বীরা পূজামণ্ডপগুলোতে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মহাসপ্তমী উদ্যাপন করেন। সপ্তমীর সকালে পূজার শুরুতেই দেবী দুর্গার প্রতিবিম্ব আয়নায় ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে স্নান করানো হয়। এরপর করা হয় নবপত্রিকা স্থাপন। নবপত্রিকার আরেক নাম হলো কলা বৌ স্নান। এ ছাড়া দেবীর চক্ষুদানের মাধ্যমে দেবী দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
হিন্দু শাস্ত্রমতে, শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে দেবী বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে আসছেন। অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশে অনুভূত হলো এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। আবির্ভূত হওয়ার পর দেবী দুর্গা আসুরিক শক্তিকে বিনাশ করে ত্রি-ভুবন রক্ষা করেন। এ কারণে দুর্গা কখনো দুর্গতিনাশিনী, কখনো সংকটনাশিনী।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর মা দুর্গা ঘোড়ায় চড়ে আগমন করেছেন। ঘোড়ায় চড়ে গমন (প্রস্থান) করবেন। দেবীর আগমন ও বিদায় একই বাহনে হলে তা অশুভ ইঙ্গিত। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ-শোক, হানাহানি-মারামারি বেড়ে যেতে পারে। তবে ৫ দিনের পূজার প্রার্থনা থাকবে সকল অশুভের বিনাশ। আগামী ২৪ অক্টোবর মহাদশমীতে প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। দেশে এ বছর দুর্গাপূজা হবে ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ।
এদিকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সকল মণ্ডপে শুক্রবার সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে মহাষষ্ঠী ও সপ্তমী পূজা। সকালে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ এবং সন্ধ্যায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাস এবং ষষ্ঠী পুজা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সঙ্গে ছিল পুষ্পাঞ্জলি, আরতি ও প্রসাদ বিতরণ। সকাল থেকেই চণ্ডিপাঠে মুখরিত ছিল দেশের সকল মন্ডপ। ঢাকের বাদ্য আর শঙ্খের ধ্বনীতে ভিন্ন মাত্রার যোগ হয়। সকালে ভক্তদের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বিকেল থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। রামকৃষ্ণ মিশনে এ উপলক্ষে সারাদিন পূজাঅর্চনা ও ভক্তিমূলক সঙ্গীতের আয়োজন।
কালের অমোগ নিয়মে আবার এসেছে শারদীয় দুর্গোৎসব। ধূপের ধোঁয়া, ঢাকের বাদ্যি বয়ে আনে আনন্দময়ী মায়ের আগমনী বার্তা। মানব হৃদয়ে জাগিয়ে তুলে আনন্দ শিহরণ। পত্র-পল্লবে, পুষ্পে-ফলে শরতের আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে শারদীয় উৎসবের আমেজ। ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, রমনা কালীমন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারের মণ্ডপের প্রবেশ মুখেই নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল আকৃতির তোড়ন। বাহারি রংয়ের কাপড় দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এইসব তোড়ন। বিভিন্ন জায়গায় নির্মিত তোড়ন থেকে শুরু করে মণ্ডপ পর্যন্ত সাজানো হয়েছে নানা রঙের ঝালর বাতি দিয়ে। বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমাগুলোকে নানা সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। পূজাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার চকবাজার, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে মেলা বসছে।
মা দুর্গার অনেক রূপের মধ্যে একটি রূপ হলো মহিষাসুর-মর্দিনী। মা দুর্গার এই রূপেই তিনি অসুর নিধন করেছিলেন। দুর্গাপূজার পিছনে বেশ কিছু অসুর বধের কাহিনী রয়েছে। যার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে সন্ধিপূজার। অষ্টমী শেষ হয়ে যখন নবমী তিথি শুরু হয় তখনই সন্ধিপূজা করা হয়। আসলে সন্ধিপূজা হলো সন্ধ্যার প্রতীক। অষ্টমী তিথি শেষ হয়ে যাওয়ার শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথি শুরু হওয়ার প্রথম ২৪ মিনিটকে বলে সন্ধিক্ষণ। এই সময়েই দেবী দুর্গা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরদের নিধন করেছিলেন। এই ঘটনাটিকে স্মরণ করার জন্যই প্রতি বছর অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপূজা করা হয়। সন্ধিপূজার অন্যতম উল্লেখযোগ্য নৈবেদ্য হলো পদ্ম। এই পূজায় দেবীকে ১০৮টি পদ্ম অর্পণ করা হয়, ১০৮টি বেলপাতা এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। নৈবেদ্যয় দেওয়া হয় গোটা ফল, জবা ফুল, সাদা চাল, শাড়ি, গহনা এবং সাজ-সজ্জার দ্রব্যও থাকে।