পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
সোমবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪

অর্ধশতাধিক এমপি বাদ পড়ছেন

জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন থেকে বর্তমান অর্ধশতাধিক এমপি বাদ পড়ছেন। গত ১৮-২১ নভেম্বর পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা নিয়েছে দলটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের প্রথম দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলীয় প্রধান ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক শুরু হয়ে চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক মুলতবি করা হয়। এ বৈঠক শেষে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, রংপুর বিভাগের ৩৩টি এবং রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের (মোট ৭২টি) দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। তবে আমরা সব আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তালিকা প্রকাশ করব না। আগামী ২৫ নভেম্বর সব বিভাগের তালিকা ঘোষণা করা হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানের সংসদ সদস্য কতজন বাদ পড়ছেন এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। তবে বাদ পড়েছেন বেশ কয়েকজন। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, কাজী জাফর উল্যাহ, রমেশ চন্দ্র সেন, ওবায়দুল কাদের, মো. রশিদুল আলম ও দীপু মনি।

সূত্র আরও জানায়, আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলটি মনোনয়নের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। দলটি মনে করে, টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকায় দলের অনেক এমপিই দলীয় শৃঙ্খলার কথা ভুলে গেছেন। বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। ফলে তারা এখন আর আওয়ামী লীগ আছে বলে মনে করেন না। তাদের অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে দেখান দাম্ভিকতা। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শক্ত অবস্থান নিয়েছেন।

সম্প্রতি গণভবনে দলীয় ফোরামের এক বৈঠকে শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, বিগত সময়ে যেমন নির্বাচন হয়েছে, তার চেয়ে এবারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাই এবার দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনা করা হবে। অনেক এমপির আমলনামা আমার কাছে এসেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বাদ যাবেন। কারও কারও বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কেউ নারী কেলেঙ্কারি, অর্থনৈতিক অনিয়ম, মালিকানা জমি দখল, সরকারি সম্পত্তি দখল ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তাদের এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এর মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীও রয়েছেন। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে যারা যারা যোগ্য তাদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি চিন্তা করছি। কারণ আওয়ামী লীগেরও অনেক পোড়খাওয়া ও ত্যাগী নেতা কিছুই পাননি, তাদের বিষয়ে চিন্তা করছি। অনেকেই আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলকে আগলে রেখেছেন, তারা সৎ, ত্যাগী, শিক্ষিত। আমি একাধিক সংস্থার মাধ্যমে জরিপ করেছি। এসব জরিপে দলের এমপি-মন্ত্রীদের কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে খোঁজ নিয়েছি। জরিপে এমপি-মন্ত্রীদের এলাকায় অবস্থান, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক, দলের ত্যাগী ও পোড়খাওয়া নেতাদের সঠিক মূল্যায়ন করেছেন কি না, নিজস্ব বলয় তৈরি করতে গিয়ে দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টিতে কোনো ভূমিকা রয়েছে কি না, দলের জন্য ভূমিকা কী ছিল, দখল ও অনিয়মের মতো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি না, দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কি না-এমন বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে। বিশেষ করে দলের মধ্যে গ্রপিং ও কোন্দল সৃষ্টিকারী, নিজ দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি, নানা ধরনের অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বেশ কিছু এমপি ও মন্ত্রী এই তালিকায় রয়েছেন। এতে মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যসহ অর্ধশতাধিক এমপির রিপোর্ট সন্তোষজনক নয়।

দলীয় সূত্র বলছে, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ৭২টি আসনে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে অন্তত ১৫ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, ৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে পঞ্চগড়-২ আসনে নুরুল ইসলাম সুজন, ঠাকুরগাঁও-১ আসনে রমেশ চন্দ্র সেন, দিনাজপুর-২ আসনে খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর-৩ আসনে ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর-৪ আসনে আবুল হাসান মাহমুদ আলী, নীলফামারী-২ আসনে আসাদুজ্জামান নূর, রংপুর-৪ আসনে টিপু মুনশি, রংপুর-৬ শিরীন শারমিন চৌধুরী, গাইবান্ধা-২ আসনে মাহাবুব আরা বেগম গিনি, গাইবান্ধা-৩ আসনে উম্মে কুলসুম স্মৃতি, জয়পুরহাট-২ আসনে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহী-৬ আসনে শাহরিয়ার আলম, নাটোর-৩ আসনে জুনাইদ আহমেদ পলক, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে তানভীর ইমাম ও পাবনা-১ আসনে শামসুল হক টুকুকে দলের সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও সূত্র দাবি করেছে।

দলীয় সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচনে বাদ পড়ছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে অর্ধশতাধিক এমপি। ফলে তরুণ, দেশের পরিচিতজন ও বিশিষ্টজনরা পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নৌকার টিকেট। এতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন বর্তমান সংসদ সদস্যরা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মধ্যে আসন বণ্টনের বিষয়টি সামনে এসেছে। এতে করে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান অনেক এমপির ঘুম হারাম হয়ে গেছে। পাশাপাশি এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিমের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনও (বিএনএম) নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা হয়েছে। এতে তাদেরও বেশ কয়েকটি আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। সঙ্গত কারণে দলটির বর্তমান সংসদ সদস্যদের বেশ কয়েকটি আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। কারণ বর্তমান সংসদ সদস্যদের আসনগুলোতে তাদের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। এসব আসনে ১৪ দলের শরিকদের কোনো প্রার্থী বা তরুণদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। যাতে করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য দলের নেতাদের নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বেগ পেতে না হয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য সময়ের আলোকে বলেন, গত ১৫ বছরে অনেক এমপি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। স্থানীয় ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করেননি। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই, তাদের বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ। তাদের এবার দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক বর্তমান সংসদ সদস্য সময়ের আলোকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাব কি পাব না, তা নিয়ে আমরা আশঙ্কায় আছি। আমরা তো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। এলাকায় আমাদের অবস্থান তৈরি হয়েছে। কিন্তু এবার যদি দলীয় মনোনয়ন না পাই সেটি হবে দুঃখজনক। তবে আশা করি নেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় সময়ের আলোকে বলেন, রংপুর বিভাগের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে বলে শুনেছি। আমি জানি না আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে কি না। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পেয়েছি আমার নাম রয়েছে। তারপরও একটি আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমি এলাকায় কাজ করেছি। এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। তাই আমি আশা করি দলীয় মনোনয়ন পাব। দলের সংসদীয় বোর্ড আমার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

ঢাকা বিভাগের বর্তমান এক সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথম দলীয় মনোনয়ন পেয়েছি। এরপর থেকে ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচনে দল মনোনয়ন দিয়েছে। আমি সবসময় এলাকার জনগণের কথা চিন্তা করেছি। হয়তো সবসময় এলাকায় যেতে পারিনি। কিন্তু সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। যদিও আমার জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটু দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও এলাকায় যথেষ্ট কাজ করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই। এত কিছুর পরও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কিছুটা আশঙ্কায় আছি। তবে আশা করি, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

তথ্যসূত্রঃসময়ের আলো

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ