পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

ঈদযাত্রায় প্রস্তুত হচ্ছে ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাস

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক: ঈদে যাত্রী পরিবহনের জন্য বাস মেরামতের হিড়িক পড়েছে রাজধানী ও এর আশপাশের ওয়ার্কশপগুলোয়। শেষ সময়ে সড়কে নামাতে ব্যস্ত শ্রমিক-মালিকরা। তবে এসব ওয়ার্কশপে দূর পাল্লার চেয়ে লোকাল, লক্কড়-ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন বাসের সংখ্যাই বেশি।
ঈদকে সামনে রেখে তৈরি হচ্ছে পুরোনো যানবাহনগুলো। কারিগরি মেরামত শেষে এসব বাসে করা হয় রঙের কাজ। আর এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে রাজধানী ও এর আশপাশের ওয়ার্কশপগুলো। মেরামত শেষে পুরোনো বাসটি নতুন রূপ নিয়ে যাত্রী পরিবহন করবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে।

রায়েরবাগের একজন রঙ মিস্ত্রি সোহেল, দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে তিনি বাস মেরামতের কাজে যুক্ত। সারাবছর তার হাত ধরে বহু যানবাহন পায় নতুন চেহারা। তবে ঈদ এলেই বেড়ে যায় তার ব্যস্ততা।

সোহেল বলেন, ‘ঈদ আসলে আমরা টার্গেট করে চার থেকে পাঁচটা গাড়ি বেশি নেই। পুরো গাড়ি রঙ করলে ১ লাখ ১০ বা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হয়। আবার কোনো গাড়ি ৫০ হাজার বা ৮০ হাজার টাকাও হয়ে থাকে। গাড়ির কাজের উপর নির্ভর করে খরচের হিসাব। সারাবছর কাজ থাকলেও, ঈদের সময় কাজের চাপ বেড়ে যায়।’

কেউ বাসের বডি মেরামত করেন, কেউ বানান আসন, কেউবা আবার রঙ করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। দিন-রাত খাটছেন ঈদের আগে বাস ডেলিভারি দিতে।

একজন শ্রমিক বলেন, ‘ঈদের আগে কাজ একটু বেশি হয়। ঈদের আগে ডিউটি হয় সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। এরপর ছুটি হয়ে যায়।’

২৭ রমজানের মধ্যে সকল বাস মেরামত করে মালিকদের বুঝিয়ে দিতে হবে জানিয়ে ওয়ার্কশপ মালিকরা বলছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

একজন মালিক বলেন, ‘কারেন্টের জন্য প্রচুর লস হচ্ছে আমাদের। আমরা একটা গাড়ির কাজ করার জন্য সময় নেই ১এক সপ্তাহের। সেখানে ১০ থেকে ১২ দিনও লেগে যাচ্ছে। দেখা যায় এক ঘণ্টা কারেন্ট থাকলে দেড় ঘণ্টা কারেন্ট থাকে না।’

বড় বাস কোম্পানিগুলো সারাবছরই তাদের গাড়ি মেরামত করে। তুলনামূলকভাবে ছোট কোম্পানি ও লোকাল বাসগুলো মেরামতের কাজ করে ঈদযাত্রী পরিবহনের উদ্দ্যেশ্যে।

ঈদে যাত্রী বহনে নামিদামি কোম্পানির বাস মেরামত ও রং করা রুটিন মাফিক কাজ হিসেবে ধরা হয়। তবে দেশের ঈদ যাত্রায় দূরপাল্লার রুটের বাসের যে সংকট তৈরি হয়, সেই সংকটকে সুযোগে পরিণত করে এক অসাধু চক্র। সড়কে নামিয়ে দেয় ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস। ফলে স্বপ্নের ঈদ যাত্রা অনেক সময় রূপ নেয় ঝুঁকিপূর্ণ সফরে

বিভিন্ন ওয়ার্কশপগুলো ঘুরে দেখা যায়, স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা লক্কড়-ঝক্কড় বাস মেরামতের হিড়িক পড়েছে। ঘষামাজা, জোড়াতালি ও রং করে যাত্রী আকর্ষণের জন্য চকচক করা হচ্ছে দুর্বল বাসগুলো। সাধারণত যে বাসগুলো রাজধানীর ভেতরে চলাচল করে সেগুলোই তৈরি করা হচ্ছে দূর পাল্লার মহাসড়কে ব্যবহারের জন্য।

সড়কপথে ঈদ যাত্রা সামাল দিতে সরকারকে আইনের কঠোর প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, সড়কে দুর্ঘটনার মূল কারণ ফিটনেসবিহীন যানবাহন।

পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হাদিউজ্জামান বলেন, ‘আসন্ন ঈদে জাকার্তা শহরে ২ কোটি থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ শহর ছাড়বে। এ সময়ে তাদের যে নেভি আছে, অনেকসময় যুদ্ধ জাহাজ বিন খরচে যাত্রীদের বিভিন্ন দ্বীপে পৌঁছিয়ে দেয়। সরকারের উদ্যোগে এই অভিনব চিন্তা-ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে হবে। নাহলে আমরা যতই বলি যে ফিটনেস বিহীন গাড়ি সড়কে নামতে দিব না। কিন্তু ৮ লাখ বা ৩৫ শতাংশ যাত্রী তো বাড়ি ফিরবেনই। তখন তারা বাধ্য হয়ে এইসব আনফিট গাড়িতে উঠবে।’

নাগরিক সংগঠন নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির তথ্যমতে, ঈদুল ফিতর উদযাপনে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার প্রায় দেড় কোটি মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করবেন। এই বিপুলসংখ্যক ঈদযাত্রীর ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ৯০ লাখ মানুষ ব্যবহার করবে সড়কপথ।

প্রতি বছরই ঈদে সড়কে দুর্ঘটনায় ঝড়ে পড়ে শতাধিক প্রাণ। আর এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলো। এছাড়া মহাসড়কে মটর সাইকেল ও থ্রি হুইলারের চলাচল নিয়ন্ত্রণও জরুরি। সর্বোপরি নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিতে হাইওয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনকে বহুমাত্রিক তৎপরতা চালানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞ ও খাত সংশ্লিষ্টদের।

তথ্যসূত্রঃএখন টিভি অনলাইন

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ