পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের চেয়ে খাবার অপচয় বেশি

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
গেল ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে বাসাবাড়ি, খাদ্য সেবা ও খুচরা পর্যায়ে মোট খাদ্যের প্রায় ১৯ শতাংশ তথা ১০০ কোটি টনের বেশি খাবার অপচয় হয়েছে। একই সময়ে গড়ে একজন বাংলাদেশি বছরে ৮২ কেজি খাবার অপচয় করেছেন। জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি-ইউনেপের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের বেশিরভাগ খাদ্য অপচয় হয়েছে বাসাবাড়িতে। মোট অপচয়ের ৬০ শতাংশই বাসাবাড়িতে হয়েছে। এ ছাড়া গড়ে একজন মানুষ বছরে ৭৯ কেজি খাবার অপচয় করেছে।

ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট-২০২৪ শীর্ষক প্রতিবেদনটির তথ্য অনুযায়ী ওই সময়ে বাংলাদেশের খাদ্য অপচয়ের এ প্রবণতা ছিল ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি। সেই সঙ্গে ইউনেপের আগের প্রতিবেদনের সঙ্গে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আগের চেয়ে ২০২২ সালে খাদ্য অপচয় বা খাদ্য উপাদান কিংবা তৈরি খাদ্য নষ্ট করার প্রবণতাও বেড়েছে। ২০১৯ সালের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ইউনেপ ২০২১ সালে যে রিপোর্ট দিয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল যে একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫ কেজি খাদ্য নষ্ট করেন। খবর বিবিসির।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বাসাবাড়িতে এক ব্যক্তি বছরে গড়ে ভারতে ৫৫, যুক্তরাজ্যে ৭৬, যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩ ও রাশিয়ায় ৩৩ কেজি করে খাবার অপচয় করেছে। তবে এ হিসেবে খাবারের সবচেয়ে বেশি অপচয় হয়েছে মালদ্বীপে ২০৭ কেজি আর সবচেয়ে কম হয়েছে মঙ্গোলিয়ায় ১৮ কেজি করে। বাংলাদেশে একেবারে উচ্চ আয়ের পরিবারগুলোতে বেশি খাদ্য নষ্ট বা অপচয় হয় বলে জানিয়েছেন গবেষক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান। তিনি খাদ্য অপচয় নিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ঢাকায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় গবেষণা করেছেন।

গবেষকরা বলছেন সাধারণভাবে খাবার সম্পূর্ণ না খেয়ে ফেলে দেওয়াটাই হলো ফুড ওয়েস্ট। আর ফুড লস হলো উৎপাদন বা আহরণের পর গ্রাহক পর্যায় পর্যন্ত না পৌঁছানো, যা প্রকৃতপক্ষে খাদ্য অপচয়ের মধ্যেই পড়ে। আবার যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে কোনো খাবার যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেটিও খাদ্য অপচয়ের আওতায় আসবে। অর্থা ফুড লস হয় মাঠ পর্যায় থেকে গ্রাহকের হাতে আসা পর্যন্ত। আর ফুড ওয়েস্ট বা অপচয় হয় গ্রাহকের হাতে আসার পর।

অধ্যাপক কামরুল হাসান ও তার গবেষক দল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে যে গবেষণা করেছেন তাতে দেখা গেছে, কমিউনিটি সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫-১৩ শতাংশ খাবার নষ্ট বা অপচয় হয়। অধ্যাপক কামরুল বলেন, বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্টুরেন্টে অনেক খাবার নষ্ট হয়। আমরা গবেষণায় পেয়েছি যে উচ্চ আয়ের বাসাগুলোতে সপ্তাহে একজন মানুষ দুই কেজির বেশি খাবার অপচয় করে থাকেন। গবেষণায় আরও দেখা গেছে উচ্চ আয়ের পরিবারগুলোতে খাদ্য অপচয় বেশি হয়, আর কম হয় একেবারে গরিব পরিবারগুলোতে। তা ছাড়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এ ক্যাটাগরির রেস্তোরাঁগুলোতেও সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্য অপচয় হয়ে থাকে। সে তুলনায় বি ক্যাটাগরির রেস্তোরাঁয় কিছুটা কম নষ্ট হয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্ডার দেওয়া এবং সব খাবার একটু চেখে দেখার প্রবণতাই রেস্তোরাঁগুলোতে খাবার অপচয়ের বড় কারণ বলে ওই গবেষণায় বলা হয়েছে। মূলত এসব কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে খাদ্য অপচয় বেশি বলে ধারণা বাংলাদেশের গবেষকদের।

গবেষকরা মনে করেন রেস্তোরাঁ বা কমিউনিটি সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশি নজরদারি বা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকায় খাদ্য অপচয় প্রতিরোধে উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশের চেয়ে ভালো করছে। তবে বাংলাদেশে খাদ্য অপচয় বিষয়টি দেখার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেছেন, খাদ্য অপচয় প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া তেমন কিছু তাদের করণীয় নেই। আমরা ভোক্তা পর্যায়ে কেউ নষ্ট বা মানোত্তীর্ণ খাবার দিলে ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু কেউ খাদ্য নষ্ট করলে বা অপচয় করলে আমাদের কিছু করার আছে বলে এখনও জানা নেই।

তথ্যসূত্রঃসময়ের আলো

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ