ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. এ মালিক (৯৪) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহ…রাজিউন)।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা সেতু।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) শাহাজাদী সুলতানা ডলি বলেন, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক স্যার আর নেই। বার্ধক্যজনিত কারণে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
আব্দুল মালিক ১ ডিসেম্বর ১৯২৯ সালের ১ ডিসেম্বর দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম ফুরকান আলী, মায়ের নাম মরহুমা সৈয়দা নুরুন্নেছা খাতুন। প্রাইমারি স্কুল শেষে ১৯৩৯ সালে সিলেট সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে মেট্রিক (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং সরকারি বৃত্তি পান।
মেট্রিক পাসের পর সিলেট সরকারি এমসি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে আইএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তখন পূর্ব পাকিস্তানে কেবল একটাই বোর্ড ছিল, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এই পরীক্ষায় তিনি ১১তম স্থান অর্জন করেন।
আইএসসি পাসের পর ১৯৪৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে নভেম্বর মাসে মেডিকেল কলেজের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন।
১৯৫৮ সালে তাকে সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) পেশোয়ারে কর্নেল আজমিরের কাছে মেডিকেল স্পেশালিস্টের যোগ্যতা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এতে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হন।
১৯৬৩ সালে সরকার তাকে বিলেতে পাঠায় উচ্চশিক্ষার জন্য। ১৯৬৪ সালে তিনি এমআরসিপি পাস করেন এবং হ্যামার স্মিথ হসপিটাল অ্যান্ড পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল স্কুল, লন্ডন থেকে কার্ডিওলজিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
হৃদরোগের চিকিৎসায় ১৯৭৮ সালে রাজধানীর মিরপুরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন আব্দুল মালিক।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৪ সালে আবদুল মালিককে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। এর দুই বছর বাদে ২০০৬ সালে জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা পান তিনি।
১৯৬৫ সাল ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। পাকিস্তান থেকে বার্তা গেল ডা. মালিকের কাছে। জানানো হলো, যেকোনো সময় তাকে ডাকা হবে। তখন প্রশিক্ষণের মাত্র ৯ মাস সম্পন্ন হয়েছে, আরও বাকি ৩ মাস। প্রশিক্ষণ শেষ না করেই ফিরে যেতে হবে ভেবে মন খারাপ হলো। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে ডাকা হয়নি। অনেক পরে জেনেছেন, তার শিক্ষক প্রফেসর গুডউইন পাকিস্তানের একজন জেনারেলকে অনুরোধ করেছিলেন আবদুল মালিককে যেন মাঝপথে দেশে না নেওয়া হয়। কারণ, একজন যোদ্ধার চেয়ে পাকিস্তানে একজন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ বেশি দরকার।
হ্যামার স্মিথের পর সুইডেনের বিখ্যাত ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটে আরও এক মাস প্রশিক্ষণ শেষে রাওয়ালপিন্ডিতে কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক মালিক। এখানেই তৈরি হয় পাকিস্তানের প্রথম কার্ডিয়াক সেন্টার। হাল ধরেন দুজন—পশ্চিম পাকিস্তানের কার্ডিয়াক সার্জন কর্নেল আকরাম আর পূর্ব পাকিস্তানের (পরে বাংলাদেশ) অধ্যাপক আবদুল মালিক।
১৯৭০ সালের মার্চ মাসে রাওয়ালপিন্ডি কার্ডিয়াক সেন্টারে সম্পন্ন হয় সমগ্র পাকিস্তানের প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি। সেই খবর গুরুত্বের সঙ্গে পত্রপত্রিকায় ছাপা হলো। পাকিস্তান সরকার এ জন্য কর্নেল আকরাম ও অধ্যাপক আবদুল মালিককে জাতীয় পুরস্কার দিয়েছিল।
১৯৭০ সালের জুনে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে কার্ডিওলজির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ডা. আবদুল মালিক। এর কয়েক মাস পরই তো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল, তাই না? মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিতেই যেন বিষণ্ন হয়ে পড়লেন অধ্যাপক মালিক।
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ। কারফিউ উঠে গেছে। পিজিতে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় দেখলেন, হাইকোর্টের সামনে ড্রেনের মধ্যে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। হাসপাতালে আহত রোগী। এক নারকীয় অভিজ্ঞতা হলো তার। ১৯৭১ সালের পুরোটা সময় তিনি পিজিতেই ছিলেন, দায়িত্ব পালন করেছেন।