ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
গাজায় চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন লড়াইয়ে মানবিক বিরতির জন্য চেষ্টা চালাতে ওই অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সে চেষ্টাতেই রোববার অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন তিনি। পশ্চিম তীরের যে অংশে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ নেই সেখানকার শাসনক্ষমতায় আছেন প্রেসিডেন্ট আব্বাস। তার মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনা জানান, ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে আব্বাস গাজায় ‘অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান’ জানিয়েছেন। তার মতো একই দাবি অন্যান্য আরব দেশেরও। তবে আরব দেশগুলোর এই দাবির সঙ্গে একমত নয় যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন এরই মধ্যে গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধবিরতির ডাক নাকচ করেছেন।
ব্লিঙ্কেনের মতে, যুদ্ধবিরতি হলে গাজায় হামাস আবার সুসংগঠিত হয়ে আরও হামলা চালানোর সুযোগ পেয়ে যাবে। তবে আরব দেশগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছে। আত্মরক্ষার্থে গাজায় ইসরাইলের লাগাতার হামলা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দিয়েছে তারা। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নিজেদের সুরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে আসছে। তবে ইসরাইলের হামলায় গাজায় যেভাবে মানুষ মরছে, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ এবং গির্জা ধ্বংস হচ্ছে, সেটিকে ইসরাইলে নিরাপত্তা ফেরানোর অজুহাত হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। আর তা এ অঞ্চলে শান্তিও আসবে না বলেই মনে করেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি।
শনিবার জর্ডান সফরকালে কাতার, সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান নাকচ করেন। তবে গাজায় মানুষ হতাহতের ঘটনা যতটা সম্ভব কমাতে ইসরাইলকে যথাসম্ভব সবরকম পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওয়াশিংটন গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা ঢুকতে দেওয়া এবং সেখানকার মানুষদের সরে যাওয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে লড়াইয়ে বিরতি দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে। এ বিষয়েই কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে ব্লিঙ্কেন ওই অঞ্চল সফর করছেন। শুক্রবার তিনি ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব সফর করেন। সেখানে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠককালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই মানবিক বিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তেল আবিবের পর শনিবার ব্লিঙ্কেন সফর করেন জর্ডানের আম্মান। এরপরই রোববার পশ্চিম তীরে যান তিনি। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকে ব্লিঙ্কেন গাজায় জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা এবং জরুরি সেবা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্লিঙ্কেন এবং আব্বাস পশ্চিম তীরে শান্ত অবস্থা এবং স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে চরমপন্থি সহিংসতা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এবং দায়ীদের জবাবদিহি করানো নিয়েও আলোচনা করেছেন।
ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল উভয়ের মর্যাদা ও নিরাপত্তার সমান পদক্ষেপ এগিয়ে নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে আবারও জানান ব্লিঙ্কেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নেও যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি। আজ সোমবার ব্লিনকেনের তুরস্ক সফরের কথা রয়েছে। সেখানেও ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি।