পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

বাইডেনের দ্বিচারিতা: একদিকে যুদ্ধের বিরোধিতা অন্যদিকে ইসরাইলে বোমা সরবরাহ

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই দখলদার ইসরাইলকে অন্ধের মতো অস্ত্র ও সমর্থন দিয়ে আসছে প্রধান মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তবে সম্প্রতি গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি ও মানবিক সংকটের পাশাপাশি আসন্ন রাফাহ অভিযান ঘিরে বারবার উদ্বেগ জানায় মার্কিন প্রশাসন। এমনকি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলেও তাতে ভেটো দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এর জেরে বেশ কয়েক দিন ধরে বিরোধ দেখা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। ফাটল ধরে এই দুই নেতার বন্ধুত্বে। কিন্তু জনসম্মুখে বাইডেন থেকে শুরু করে মার্কিন কর্তাব্যক্তিরা ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে ইসরাইলবিরোধী কথার ফুলঝুরি ছিটিয়ে গেলেও পর্দার আড়ালে ঘটে গেছে ভয়াবহ আরেক ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইসরাইলকে বিলিয়ন ডলার মূল্যের বোমা ও যুদ্ধবিমান হস্তান্তর করার অনুমোদন দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে এমন তথ্য ফাঁস করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

বহু যুগ ধরে ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের ময়দান থেকে শুরু করে বিশ্ব কূটনীতি-সব জায়গায় ইসরাইলের ঢাল হিসেবে কাজ করে দেশটি। প্রতি বছর ইসরাইলকে প্রায় ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৩৮০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে গাজায় ভয়াবহ বোমা হামলা এবং স্থল অভিযান ঘিরে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে ইসরাইল। এমনকি খোদ বাইডেন প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ইসরাইলকে দেওয়া সামরিক সহায়তা বন্ধের দাবি করেছিলেন।

এত কিছুর পরও পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের মধ্যেই ইসরাইলকে নতুন করে সামরিক সহায়তার অনুমোদন দিল ওয়াশিংটন। এসবের মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৮০০টি এমকে৮৪-২০০০ পাউন্ডের বোমা, ৫০০টি এমকে৮২-৫০০ পাউন্ডের বোমা এবং ২৫টি এফ-থার্টি ফাইভ/এ যুদ্ধবিমান। গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়ার মধ্যেই অস্ত্র পাঠানোর অনুমোদন দিল ওয়াশিংটন।

তবে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হোয়াইট হাউস এবং ওয়াশিংটনের ইসরাইলি দূতাবাস। প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলা হয়েছে, এর আগেও গাজায় হামলা চালাতে দুই হাজার পাউন্ডের এই বিধ্বংসী বোমা ব্যবহার করেছে ইসরাইল। এই বোমার আঘাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ফিলিস্তিনি হতাহত হয়, ধূলিস্মাৎ হয়ে যায় বিভিন্ন স্থাপনা। এ ধরনের বোমা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে ব্যবহৃত হয় এবং এর আঘাতে ৪০ ফুটেরও বেশি চওড়া গর্ত তৈরি হয়। এমনকি পশ্চিমা সামরিক বাহিনীও হতাহতের ঝুঁকি বিবেচনা করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই বোমার ব্যবহার বাদ দিয়েছে অনেক আগেই।

অথচ শুক্রবার ‘আরব আমেরিকান হেরিটেজ মান্থ’ উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মুসলিমদের কষ্ট বোঝার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ২০২১ সালে এপ্রিল মাসকে ‘আরব আমেরিকান হেরিটেজ মান্থ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কালই শুরু হতে যাচ্ছে সেই হেরিটেজ মান্থ-এপ্রিল। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, আরব আমেরিকানরা যে দুঃখ অনুভব করছেন, তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অবশ্যই আমাদের এই (ইসরাইলকে) সমর্থনে বিরতি দেওয়া উচিত। তাদের কষ্ট আমি বুঝি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও সে জন্য দুঃখ ভারাক্রান্ত। এ সময় বাইডেন জানান, গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানো, হামাসের হাতে বন্দিদের মুক্ত করতে এবং কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ স্থায়ী একটি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন তিনি। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, এই বার্তা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরাইলে বোমা ও যুদ্ধবিমান পাঠানোর সম্মতি দেন বাইডেন।

ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের মতে, ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫৩ জন জিম্মিকে আটক করার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় বিমান ও স্থল হামলা চালায়। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃসময়ের আলো

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ