পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

বোয়িং ৭৮৭-এ গুরুতর ত্রুটি, সব বিমান গ্রাউন্ডেড করার পরামর্শ

হুইসেল ব্লোয়ারের সতর্কবার্তা

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
যান্ত্রিক গোলযোগের আশংকায় সব ৭৮৭ ড্রিমলাইনারস গ্রাউন্ডেড করে ত্রুটি সারানোর অনুরোধ জানিয়েছেন বোয়িংয়ের হুইসেল ব্লোয়ার স্যাম স্যালেপোর। গত সপ্তাহে মার্কিন উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত স্যালেপোর বোয়িং ৭৮৭ ও ৭৭৭ জেট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

তবে মঙ্গলবার আরো এক ধাপ এগিয়ে এনবিসি নিউজ চ্যানেলে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, সব ড্রিমলাইনারসের কার্যক্রম বন্ধ করে উড়োজাহাজগুলোর কাঠামোতে থাকা ত্রুটি শনাক্তের প্রয়োজন। সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘এরকম গুরুতর সমস্যা তিনি জীবনে কখনও দেখেন নি।

তার পরিবারকে কখনোই তিনি ড্রিমলাইনারস ৭৮৭ এ ভ্রমণ করতে দেবেন না।’ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সৃষ্টি ব্যর্থতা এড়াতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তার অভিযোগ, ৭৮৭ ও ৭৭৭ মডেল নির্মাণের খরচ কমাতে শর্টকাট বেছে নেয় বোয়িং কম্পানি। উড়োজাহাজগুলো সংযোজনের সময় নির্দিষ্ট ডিজাইন যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি মার্কিন কম্পানিটি।

উড়োজাহাজের মেইন বডি বা প্রধান কাঠামোর অংশগুলো নিখুঁতভাবে জোড়া দেওয়া হয়নি। ফলে সংযোগস্থলে ফাঁকা জায়গা রয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত এগুলো আকাশে উড়লে চাপের কারণে মধ্যআকাশেই ভেঙে পড়তে পারে।
৭৮৭ সংযোজনের সময় তিনি মেকানিকদেরকে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন অংশ জোড়া দিতে দেখেছেন।

ফাঁকা জায়গার অস্তিত্ব যেন বোঝা না যায় তা নিশ্চিতে এটা করা হয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে উড়োজাহাজ তৈরির সময় ছোট ছোট মেটালের টুকরা ব্যবহার করা হয়। এর নাম ‘শিমস’। এগুলো ছাড়াই আনেক সময় ৭৮৭ নির্মাণ করা হয়েছে। ‘শিমস’ না থাকলে উড়োজাহাজের আয়ু স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়।
এছাড়াও, বাতাসের অত্যধিক চাপে উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশগুলো খুলে পড়ার আশংকা থাকে।
বোয়িংকে এই শঙ্কার কথা তিনি জানালেও তারা কর্ণপাত করেনি। উল্টো তাকে ৭৮৭ থেকে ৭৭৭ জেট বিভাগে বদলি করে দেয়। বদলি হওয়ার পর ৭৭৭ জেট নির্মাণের ক্ষেত্রেও তিনি একই রকম গাফিলতি লক্ষ্য করেন।

গ্লোবাল নিউজের জানিয়েছে, গত জানুয়ারিতে ফেডেরাল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফএএ) হুইসেল ব্লোয়ার হিসেবে অভিযোগ দায়ের করেন স্যালেপোর। ঠিক সে সময় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৯ মডেলের উড়োজাহাজের দরজা মাঝ আকাশে খুলে পড়লে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে বোয়িং। স্যালেপোরের অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে এফএএ।

তবে স্যালেপোরের এসব অভিযোগ নাকোচ করে বোয়িং জানিয়েছে, ‘৭৮৭ ও ৭৭৭ কোনোটি নিয়েই চিন্তার কারণ নেই’।

বুধবার এনবিসিতে স্যাম সালেহপৌরের সাক্ষাৎকার প্রচারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি বিবৃতি দিয়েছে বোয়িং কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বোয়িং খুবই পেশাদার একটি প্রতিষ্ঠান এবং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের বিমানগুলোর নিরাপত্তা ও মসৃন উড্ডয়ন পরিষেবা সম্পর্কে কোম্পানি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী।’

বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার হলো দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট মাঝারি আকারের সুপরিসর উড়োজাহাজ। ২০১১ সালে এই সিরিজের বিমান প্রথম বাজারে আনে বোয়িং। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ড্রিমলাইনার সিরিজের ১ হাজার ১শ’রও বেশি উড়োজাহাজ যাত্রী পরিষেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে এই সিরিজের ৬টি উড়োজাহাজ রয়েছে। উড়োজাহাজগুলোর নাম আকাশবীণা, গাঙচিল, সোনার তরী, হংস বলাকা, রাজহংস এবং অচিন পাখি।

এদিকে বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে আদালতে প্রমাণ সরবরাহকারী বা ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ জন বারনেটের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বারনেট প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ছিলেন। গত ১১ মার্চ উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ। খবর বিবিসির।

বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে চলমান একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলেন তিনি। ৯ মার্চ নির্ধারিত শুনানির সময় উপস্থিত না হওয়ায় খোঁজ করা হয় হোটেলে। সেখানে নিজের গাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। জন বারনেটের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছে বোয়িং। আত্মহত্যা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছে।

টানা ৩২ বছর বোয়িংয়ের হয়ে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি থেকে অবসরে যান ৬২ বছর বয়সী বারনেট। এর দুবছর পর বিস্ফোরক অনেক তথ্য দেন গণমাধ্যমকে। জানান, নিম্ন মানসম্পন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয় বিমানটি উৎপাদনে। বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে চলমান মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন তিনি।

তথ্যসূত্রঃকালের কণ্ঠ

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ