ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
আজ ১৭ মার্চ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস। মুক্তিযুদ্ধের এই মহানায়ক ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শিশুকালে ‘খোকা’ নামে পরিচিত সেই শিশুটি পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তার হাত ধরেই আসে বাঙালির স্বাধীনতা, বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। জাতীয় শিশু দিবসে এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে’।
জাতি যথাযোগ্য মর্যাদা ও উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ দিবসটি উদযাপন করবে। দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ঢাকা, টুঙ্গিপাড়াসহ সারা দেশে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। এ উপলক্ষে সেখানে শিশু সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বইমেলাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর পিতার নাম শেখ লুত্ফর রহমান ও মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। শেখ মুজিবুর রহমান কিশোর বয়সেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবার কারাবরণ করেন। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পরিণত হন। এক রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসাবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে পরিচালিত করছিলেন, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ৫৫ বছর বয়সে কিছু বিপথগামী সেনা কেড়ে নেন তার প্রাণ। কিন্তু দেশের প্রতিটি কোনায় আজ উচ্চারিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই…’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু কিংবা জন্মবার্ষিকীতে এ গানটি বাজানো হয় অবধারিতভাবেই। এই গানের আকুতির মতোই সত্যিই যদি বঙ্গবন্ধু মারা না যেতেন, তাহলে আজ তার বয়স ১০৪ বছর পূর্ণ হতো। জনতার নেতা বঙ্গবন্ধু না থাকলেও তার আদর্শ ও অনুপ্রেরণা আজও বাঙালির মননে গেঁথে আছে। শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, কৃতজ্ঞচিত্তে আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করবে বাঙালি।
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক বাণীতে বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তার কর্ম ও আদর্শ চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। সকল আশঙ্কা ও নেতিবাচক ধ্যানধারণাকে ভুল প্রমাণ করে জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন তার সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আজ ‘আমরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি একটি উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অভিমুখে’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেন, জাতীয় শিশু দিবসে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মহান নেতার জীবন ও আদর্শ অনুসরণে এ দেশের শিশুদের যথাযোগ্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আজকের শিশুরাই হবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে আজকের শিশুরাই। দলমত নির্বিশেষে সকলে মিলে একযোগে কাজ করে শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠন, সৃজনশীলতার বিকাশ, আত্মবিশ্বাসী এবং মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী’ এবং ‘জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং দেশের সব শিশুসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর শিশুদের প্রতি অপরিসীম মমতা ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ; শিশুরাই তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে—এই ভাবনা থেকেই জাতিসংঘ শিশু সনদের ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালে তিনি শিশু আইন প্রণয়ন করেন। শিশু শিক্ষার বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন।
বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের একজন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ব্রিটিশবিরোধী সভা-সমাবেশে অংশ নেন তিনি। চল্লিশের দশকে এই তরুণ ছাত্রনেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সংস্পর্শে এসে সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তি কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি।’ ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে দেওয়া “বঙ্গবন্ধু” খেতাবে এই দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি দেশের মানুষের গভীর ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়।’
কর্মসূচি :বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসসমূহে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করা হবে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আজ সকালে হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় রাষ্ট্রপতি জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এদিন টুঙ্গিপাড়ায় সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির নেতারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শিশু সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচি পালন করা হবে। আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে সারা দেশে যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনের জন্য দল এবং দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।