পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

আমদানির খবরে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক: নিজেদের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গত বছরের ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ভারত। পরে এ নিষেধাজ্ঞা চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে সে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশটি বাংলাদেশসহ আরো পাঁচটি দেশে সীমিত আকারে পেঁয়াজ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই দেশের বাজারে কমতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যটির দাম।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পেঁয়াজ রফতানির ওপর ভারত সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের খাতিরে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মরিশাস, ভুটান, বাহরাইন ও নেপালে তারা পণ্যটি রফতানি করবে। তবে কী পরিমাণ রফতানি হবে তা জানা যায়নি।

দেশের বাজারে গত বছর থেকেই অস্থিতিশীল পণ্যগুলোর একটি পেঁয়াজ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত পণ্যটি রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করলে দেশের বাজারেও এর বেশ প্রভাব পড়ে। বর্তমানে রাজধানীতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ১২০-১৩০ টাকা কেজি। তবে ভারতের রফতানির সিদ্ধান্তে রাজধানীতে পেঁয়াজের দামে তেমন প্রভাব না পড়লেও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে গতকাল কেজিতে কমেছে ১০ টাকা।

স্থলবন্দরে খোঁজে নিয়ে জানা যায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে বাজারে হঠাৎ পণ্যটির সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এতে একদিনের ব্যবধানে দেশী পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা। একদিন আগেও পাইকারিতে ১০০ ও খুচরায় ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ গতকাল ৯০ ও ১০০ টাকায় মিলেছে।

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে সরবরাহ যেমন বাড়বে, তেমনি দামও কমে আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা শাকিল খান বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। সম্পূর্ণ দেশী পেঁয়াজ দিয়েই বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হচ্ছিল। আমরা পাবনাসহ আশপাশের অঞ্চলগুলো থেকে পণ্যটি এনে সে চাহিদা মেটাচ্ছি। সরবরাহ ভালো থাকায় দাম মোটামুটি কমতির দিকেই ছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ থেকেই পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করছে।’

তিনি বলেন, ‘পাবনার মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। তাই বাজারে এর সরবরাহ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি দামও বেড়ে যায়। অনেকে পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছিলেন। কিন্তু ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হবে এমন খবরে মজুদদাররা এখন সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে মোকামে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।’

সামনে রমজান মাস। দেশে এ সময় পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদা থাকে। তাই ভারত থেকে পণ্যটি আমদানির জন্য আগে থেকেই অনুমতিপত্র (আইপি) নিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এ তথ্য জানিয়ে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এলসি খোলা থেকে শুরু করে পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। গতকাল আমরা ভারতীয় রফতানিকারকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি এবার ভারতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। তাই গতকাল পণ্যটি রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি বছর ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টন। এর মধ্যে চারা পেঁয়াজ ২৭ লাখ ২৮ হাজার টন, কন্দ পেঁয়াজ ৮ লাখ ১৯ হাজার ও পেঁয়াজবীজ ৫৬ হাজার টন।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। সর্বশেষ অর্থবছরে ৩৪ লাখ টনের বেশি উৎপাদন হয়। তবে মাঠ পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত যেতে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয় কিংবা শুকিয়ে কমে যায়। গত বছরের মার্চে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তবে এপ্রিলের মাঝামাঝি নিত্যপণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। জুনের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০০ টাকায় ঠেকলে আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে গত ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ২৯১ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। যদিও এর বিপরীতে আমদানি হয়েছে কেবল ৭ লাখ ৫ হাজার ৪৩৭ টন।

এদিকে গত ৮ ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বাড়াতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি। এর আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ভারত পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানি মূল্য প্রতি টন ৮০০ ডলার নির্ধারণ করেছিল।

ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নেতৃত্বে রোববার মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠকে পেঁয়াজ রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম ধাপে ওই বৈঠকে তিন লাখ টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমোদন দেয় মন্ত্রীদের কমিটি। এতে বাংলাদেশেও ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রফতনির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সম্পর্কিত বিভিন্ন শর্তাবলির বিষয়ে দু-একদিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমদানি এখনো শুরু হয়নি। ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম কমে আসবে। তবে পাইকারিতে এখনো দাম কমেনি। পাঁচদিন ধরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি করছি। অবশ্য যেহেতু আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে দাম অনেকটাই কমে আসবে।’

তথ্যসূত্রঃবণিক বার্তা

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ