ছয় দফা নিউজ ডেস্ক: বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন রক্ষায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র এবং জীববৈচিত্র্যের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে।
বন বিভাগের ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সুন্দরবনে ১,৪০,৩৫৭টি চিতল হরিণ দেখা গেছে, যা স্পটেড ডিয়ার নামেও পরিচিত। অথচ ২০০৪ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৩,০০০।
এছাড়া সুন্দরবেনে ২০২৩ সালে বন্য শূকরের দেখা পাওয়া গেছে ৪৫,১১০টির। এ সংখ্যা ২০০৪ সালে ছিল ২৮,০০০। বানরের সংখ্যা ২০২৩ সালে প্রায় ১,৫২,৪৪৪, যেখানে ২০০৪ সালে ৫১,০০০ ছিল।
জরিপ থেকে আরো জানা গেছে, ২০২৩ সালে ম্যানগ্রোভ বনে ২৫,১২৪টি গুইসাপ এবং ১২,২৪১টি সজারু পাওয়া গেছে।
বনরক্ষকরা বলেছেন, জরিপের ফলাফলে প্রমাণিত হয়েছে, সুন্দরবন সংরক্ষণে সরকার যে বিভিন্ন বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েছে তা বনে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
অতীতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশকে রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচনা এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বন থেকে গাছ কাটার অনুমোদন দেওয়া হতো। বর্তমানে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে সরকার ২০৩০ সাল পর্যন্ত এ বন থেকে গাছ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন বিভাগ এখন স্থানীয় জনগণকে শুধুমাত্র মৌসুমের ভিত্তিতে গৌণ বনজ সম্পদ যেমন মাছ, কাঁকড়া, মধু এবং গোলপাতা সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে।
বাসস’র হাতে আসা একটি সরকারি নথি অনুসারে, ১৯৯৬ সালে সুন্দরবনের ১,৩৯৭ বর্গকিলোমিটারের তিনটি এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, যা মোট বনের ২৩.২১ শতাংশ ছিল। ২০১৭ সালে সংরক্ষিত এ এলাকা প্রায় ৩,১৮০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়।
এছাড়া, প্রকৃতির মনোগ্রাহী এ সৃষ্টিকে রক্ষার লক্ষ্যে সরকার সুন্দরবনের ৪০.৫২ কিলোমিটার বিস্তৃত খালের পাঁচটি এলাকাকে ‘ডলফিন অভয়ারণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বনের সংরক্ষিত এ এলাকায় সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমনের জন্য, বন বিভাগ ২০১৫ সাল থেকে সুন্দরবনে স্মার্ট (স্পেশাল মনিটরিং অ্যান্ড রিপোর্টিং টুলস) টহল পরিচালনা করছে। এর ফলে ম্যানগ্রোভ বনে বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে।
বন বিভাগের তথ্য মতে, জানুয়ারী ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত স্মার্ট টহলের মাধ্যমে মোট ২,৪৯৮ জন অপরাধীকে গ্রেফতার এবং ১,১৬৯টি জলযান জব্দ করা হয়েছে।
সুন্দরবনে মানব-প্রাণী সংঘাত কমিয়ে আনার জন্য সরকার ২০২১ সালে একটি নীতি প্রণয়ন করেছে যাতে পশুর আক্রমণের শিকার হওয়া লোকজনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়। বাঘ বা কুমিরের আক্রমণে কোনো ব্যক্তি নিহত হলে তার পরিবারকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। বাঘ বা কুমিরের আক্রমণে কেউ আহত হলে এক লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
সুন্দরবনের প্রধান প্রজাতি বাঘ সংরক্ষণের জন্য সরকার ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২০২৭) প্রণয়ন করেছে। বন বিভাগ বনে বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব কমাতে স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে ৪৯টি গ্রামে বাঘ প্রতিরোধী দল গঠন করেছে।
বঙ্গোপসাগরে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর ব-দ্বীপে গড়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বনভূমি ম্যানগ্রোভ বন।
এটি বাংলাদেশের খুলনার বালেশ্বর নদী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত।
সুন্দরবন প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে, যার মধ্যে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বনাঞ্চল ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটারের বেশি এবং পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ৩,৪৮৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত।
সুন্দরবন চরম বিপন্ন বেঙ্গল টাইগারদের আবাসস্থল। সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্র এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য ম্যানগ্রোভ বনকে ১৯৯২ সালে রামসার সাইট হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ১৯৯৭ সালে ম্যানগ্রোভের চারটি সংরক্ষিত এলাকাকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
সরকারি উদ্যোগে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন
তথ্যসূত্রঃবাসস