ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
তারকা হয়ে যাওয়ার পর ভোগ-বিলাস আর সাধারণ মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে সবাই পারে না। পারে না ভেতরে প্রতিবাদী কথাগুলো সবার সামনে অবলীলায় বলে দিতে, বাউন্ডুলে হয়ে সাদামাটা জীপন যাপন করতে। কিন্তু নচিকেতা সেটা পেরেছেন, এখনও পারছেন। এই জন্য এখনও তিনি বহুপ্রাণের শক্তি, হতাশাবাদীদের প্রেরণা। ত্রিশটি বসন্ত এভাবেই কাটল তার!
শুক্রবার রাতে ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের মঞ্চ মাতান বাংলা গানের জীবনমুখী ধারার এ শিল্পী। সন্ধ্যায় একের পর এক গান-কথার জাদুতে মাতিয়ে তুলছেন। গান শেষ হলেই দর্শক সারি থেকে আসছে মুহুর্মুহু করতালি।
কনসার্টের প্রথম ভাগে ছিল সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ারের পরিবেশনা। আর দ্বিতীয় ভাগে মঞ্চ মাতান নচিকেতা, তার সংগীত দলের অর্ঘ্য কমলও গান পরিবেশন করেন।
‘তোমাকে আসতেই হবে’ দিয়ে শুরু করা জয় একে একে গেয়ে শোনান ‘আমিতো এমনই’, ‘আমি নেই’সহ বেশ কিছু গান। রাত সাড়ে ৮টায় গান শুরু করেন নচিকেতা, গানের ফাঁকে চলে কথোপকথন। রাত ১০টায় ‘নীলাঞ্জনা’ গানের মধ্য দিয়ে পরিবেশনা শেষ করেন এই শিল্পী।
গানের মাঝে দর্শক সারিতে মোবাইল ফোনে ভিডিও করা নিয়ে গানের ফাঁকে বিরক্তিও ঝরে নচিকেতার কণ্ঠে। গান থামিয়ে তাই চিরায়ত নিয়মে ধমকও দেন। বলে উঠেন, “এই যন্ত্রটা খুবই বিরক্তিকর। একটা লোক গান গাইছে, তা না শুনে ভিডিও করে যাচ্ছে। এখন যা বলছি, সেটাও ভিডিও করছে। আসলে বুঝতেই পারছে না, কী বলছি।”
শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিরক্তির কথা জানিয়ে নচিকেতা বলেন, “মায়েরা সন্তানদের স্কুলের টিফিন দিয়ে বলে দেন, ‘একা একা খাবি, কাউকে দিবি না’; ‘এটা করবি না, ওটা করবি না’। বাচ্চার পেছনে মায়েরা যেভাবে লেগে থাকেন, সেভাবে যদি দেশটা নিয়ে লাগত- তখন দেশটাই পালটে যেত। এই শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমার অনেক রাগ।
“বিয়ে বাড়িতে গেলেও দেখবেন, কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করছে ছেলেমেয়ে কী করে? এই প্রশ্নটা বেকারদের জন্য যে কতটা বিব্রতকর।” কথা বলতে বলতেই নচিকেতা গেয়ে শোনান, ‘আমি ভবঘুরে হব/এটাই আমার অ্যাম্বিশন’।
‘নচিকেতা লাইভ ইন ঢাকা উইথ জয় শাহরিয়ার’ শীর্ষক এ আয়োজনের উদ্যোক্তা ‘আজব কারখানা’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল হাসান বাবু ও কাজী বুশরা আহমেদ তিথি।
গাওয়ার এক ফাঁকে আজব কারখানার কর্ণধার ও গায়ক জয় শাহরিয়ারকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে নচিকেতা বলেন, “আমি এই ছেলেটাকে ভীষণ পছন্দ করি।” এরপর জয় শাহরিয়ার ও নচিকেতা দ্বৈতকণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘ভেবে দেখেছ কি’।
নচিকেতার সংগীত দলে তবলায় ছিলেন প্রজেনজিৎ, গিটারে ছিলেন রূপক এবং কি-বোর্ডে ছিলেন অর্ঘ্য কমল।
দেড় ঘণ্টা ধরে মঞ্চে নচিকেতা গেয়েছেন রাজশ্রী তোমার জন্য, তুমি আসবে বলেই, দেখে যা অনির্বাণ, আমার ইচ্ছে করে, হয়তো তোমার জন্য, বৃদ্ধাশ্রম, একদিন ঝড় থেমে যাবেসহ ১৫টিরও বেশি গান।