পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শনিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
স্বপ্নের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১২টায় চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। সুইচটিপে টানেলের পর্দা উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে দিনের আলোকে আরও উদ্ভাসিত করে তোলে আতশবাজি। পরে টোল দিয়ে গাড়িতে করে টানেল পার হন সরকারপ্রধান। এ সময় নৃত্যশিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। সেখানে আনোয়ারার কেইপিজেড মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন তিনি।

টানেল উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ অনেকে।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তিন দশমিক ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেল নির্মাণের ফলে কর্ণফুলী নদীর উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তকে সুড়ঙ্গ পথের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করেছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এবং আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশ দিয়ে সংযোগ স্থাপন করছে। আগামীকাল (রবিবার) থেকে এই টানেলে যান চলাচল শুরু হবে।

টানেলের টিউবের দৈর্ঘ্য দুই দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুইটি টিউব। এই দুই টিউবের বুক চিরে নির্মিত হয়েছে চার লেনের সড়ক। টিউবের দুই লেনের এই সড়কের প্রশস্ততা ৩৫ ফুট এবং টানেলের উচ্চতা ১৬ ফুট। টানেলের উত্তর টিউব দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আনোয়ারার দিকে এবং দক্ষিণ টিউব দিয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে শহরমুখী যানবাহন চলাচল করবে।

টানেলে দুইটি টিউব থাকলেও সংযোগ পথ আছে তিনটি। এর মধ্যে একটি বিকল্প পথ। প্রথম দুটি টিউবের সঙ্গে এটি যুক্ত। কোনো কারণে টানেলের মূল দুটি পথে বাধা সৃষ্টি হলে তৃতীয় পথ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হবে। দুই টিউবের মধ্যে প্রথম সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ১৪ মিটার। দ্বিতীয় বা মধ্যবর্তী সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৩৪ মিটার এবং তৃতীয় সংযোগ পথের দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৭৪ মিটার। এসবের প্রতিটির ব্যাস গড়ে সাড়ে ৪ মিটার।

এদিকে টানেলের আনোয়ার প্রান্তের প্রবেশ মুখে স্থাপিত হয়েছে টোলপ্লাজা। এক সারিতে রয়েছে ১৪টি টোলপ্লাজা। ১৪টি যানবাহন একসঙ্গে টোল দিতে পারবেন। টোলপ্লাজার দূরত্ব ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার। টোল প্লাজা থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পিচঢালা সংযোগ পথের আইল্যান্ডে রয়েছে- বাহারি ফুল গাছ। টানেলের প্রবেশমুখের আগেই রয়েছে অত্যাধুনিক হলুদ রঙের ছাউনি। মূল টানেলের ভেতরে ঢুকার আগে নির্দেশনা রয়েছে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর জন্য। টানেলের কিছুু অংশ অতিক্রম করলে দেখা যাবে লোহার তৈরি একটি বিশাল আকৃতির গেট। যেটি টানেলে ফ্লাট গেট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বন্যা, অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে এই ফ্লাড গেট। তখন বন্ধ হয়ে যাবে টানেল।

টানেলের ভেতরের দেয়ালে কিছু দূর পর পর রয়েছে বিশেষ ধরনের সাউন্ড সিস্টেম বা মাইক, সিসিটিভি ও টেলিফোন। দেয়ালে লাগানো এসব সাউন্ড সিস্টেমের সঙ্গে রয়েছে ফায়ার অ্যালার্মও। টানেলের ভেতরে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠবে সাইরেন। সাউন্ড সিস্টেমের নিচে রাখা হয়েছে ফায়ার অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এসব দিয়ে যাত্রীরা প্রাথমিকভাবে আগুন নেভাতে পারবে। এ ছাড়াও টানেলের ভেতরে ২৫০ মিটার পরপর রয়েছে ইমার্জেন্সি এক্সিট। কোনো দুর্ঘটনা হলে এই এক্সিট পয়েন্ট দিয়ে যাত্রীরা সড়কের নিচে বের হতে পারবেন।

এ ছাড়াও টানেলের ভেতরে রয়েছে তিনটি বিশাল ক্রস প্যাসেজ। দুর্ঘটনা হলে খুলে যাবে এসব প্যাসেজ। এসব ক্রস প্যাসেজ নদীর তলদেশ থেকে গভীরতা ২৫ মিটার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যৌথভাবে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের প্রথম টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জিটুজি ভিত্তিতে (সরকারের সঙ্গে সরকারের) বাংলাদেশ ও চীন সরকার যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। শুরুতে টানেল প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। পরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে প্রকল্পের ব্যয় ঠেকেছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার অর্থ সহায়তা দিয়েছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা সহায়তা দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চীনের ‘চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড’ এই বৃহৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ