পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
সোমবার, অক্টোবর ২১, ২০২৪

মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশনে প্লাটফর্মসহ বিভিন্ন স্থাপনার উন্নয়ন হলেও নেই ঢাকাগামী আন্তঃনগর কোন ট্রেনের যাত্রাবিরতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, (গোবিন্দগঞ্জ) গাইবান্ধা:
রেলপথে রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার ও গাইবান্ধা জেলার বৃহত্তম উপজেলা গোবিন্দগঞ্জের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন মহিমাগঞ্জে যাত্রাবিরতি নেই রাজধানী ঢাকাগামী কোন আন্তঃনগর ট্রেনের। ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশনের বুক চিরে প্রতিদিন হুইসেল বাজিয়ে না থেমে তীব্র বেগে চলে যায় দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন। ঢাকায় যাতায়াত করতে সময় ও অর্থ অপচয় করে পাশের স্টেশনে যেতে হয় গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার যাত্রীদের। সান্তাহার থেকে বুড়িমারীগামী আন্তঃনগর করতোয়া এক্সপ্রেস ও সান্তাহার থেকে পঞ্চগড়গামী আন্তঃনগর দোলনচাাঁপা এক্সপ্রেস এর দুই জোড়া ট্রেনসহ ১০টি ট্রেনে ভরপুর যাত্রী এবং রাজস্ব আদায়ে শীর্ষ পর্যায়ের এই স্টেশনের যাত্রীরা অবিলম্বে রাজধানী ঢাকাগামী একটি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বাণিজ্যিক ও ভৌগলিক কারণে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ মহিমাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিদিন আন্তঃনগর, কমিউটার ও লোকালসহ ১০টি ট্রেন যাত্রাবিরতি দিলেও এখানে থামে না কোন রাজধানী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বা যাওয়ার আন্ত:নগর ট্রেন। সম্প্রতি এই রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটর্ফম, যাত্রীছাউনি ও বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক উন্নয়ন করা হলেও রাজধানীর সাথে যোগাযোগের জন্য মুল অংশটিই থেমে আছে রাজধানীগামী আন্তঃনগর কোন ট্রেনের যাত্রাবিরতি না থাকায়। গোবিন্দগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার একটি বড় অংশের মানুষের যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন রেলের অন্যতম প্রধান এই স্টেশনকেন্দ্রিক যাত্রীরা চরম অবহেলিত হয়ে রয়ে গেছেন আজও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন। বৃটিশ শাসনামল থেকে ভৌগলিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেশন হিসেবে পরিচিতি পায়। যাত্রীচাহিদার কারণে ওই সময়ে এই স্টেশন থেকে সরাসরি কোলকাতার টিকেট বিক্রি হতো। পরবর্তীতে পাকিস্তান শাসনামল ও স্বাধীনতার পর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানে ঢাকাগামী দুটি ট্রেন যাত্রাবিরতি দিতো। কিন্তু বিগত কয়েক বছর আগে লোকবলের অভাবে স্টেশনটিতে একাধিকবার বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রাখে রেল কর্তৃপক্ষ। এ দিকে এই সময়ে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটে। তখন এই পথের রংপুর ও লালমনিরহাটের মধ্যে চলাচলের জন্য ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ও ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ নামে রাজধানীগামী দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। কিন্তু এর একটি ট্রেনেরও যাত্রাবিরতি দেয়া হয়নি মহিমাগঞ্জে।

মহিমাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিয়াউল হক জানান, মহিমাগঞ্জে বাংলাদেশের বৃহত্তম চিনিকল ‘রংপুর সুগার মিলস’ এবং অনেকগুলো পাটের গুদাম ছাড়াও ধান-চালের ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করায় তৎকালীন গাইবান্ধা মহুকুমা শহরের বাইরে কেবলমাত্র এখানেই ছিল ব্যাংক, টেলিফোন ও চিনিকলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সেবা। বগুড়া বা গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন ছাড়া এই স্টেশনটিই বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় ঝলমল করতো। বর্তমানেও গাইবান্ধা জেলার বৃহত্তম উপজেলা গোবিন্দগঞ্জের প্রধান এই রেলওয়ে স্টেশনটি বিভিন্ন সূচকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। রেলওয়ের লালমনিরহাট-সান্তাহার সেকশনের মধ্যে মহিমাগঞ্জ অনেক বেশি আয় অর্জনকারী একটি স্টেশন। অথচ এখানকার চাইতে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনেও ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি দেয়া আছে।

মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম প্রধান বলেন, প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে অনেক যাত্রী ঢাকায় যাতায়াত করেন পাশের বোনারপাড়া বা সোনাতলা স্টেশন ব্যবহার করে। এতে সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হয়। এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে অচিরেই মহিমাগঞ্জে রাজধানীগামী আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি দিতে হবে।

গোবিন্দগঞ্জ শহরের আমদানী-রপ্তানী ব্যবসায়ী রতন রাজভর অভিযোগ করে বলেন, জেলার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে অন্যতম উপজেলা গোবিন্দগঞ্জ থেকে ট্রেনে ঢাকায় যাতায়াত করা যাবে না, এটা অবিশ^াস্য।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল লতিফ প্রধান জানান, রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগের জন্য যে কোন একটি আন্তঃনগর ট্রেনের মহিমাগঞ্জ স্টেশনে যাত্রাবিরতির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এখানকার যাত্রীদের দুর্দশা লাঘবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অচিরেই যাত্রাবিরতির সিদ্ধান্ত নেবেন এখানে।

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ