পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

গোবিন্দগঞ্জে ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে করতোয়া নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ

জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, (গোবিন্দগঞ্জ) গাইবান্ধা:
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া ও বাঙ্গালী নদীতে পানি বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এর ফলে উপজেলার দুই ইউনিয়নের তিন-চারটি পয়েন্টে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। করতোয়া নদীর কাটাখালী পয়েন্টে (চকরহিমাপুর স্টেশন) শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ২৪ ঘন্টায় এখানে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ সেন্টিমিটার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গাইবান্ধা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর ১২টায় ব্রহ্মপুত্র ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আর কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার নিচে, গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রীজ পয়েন্টে ঘাঘট ২০০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে করতোয়া ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসময় নদ-নদীগুলোর পানির স্তর ছিল- তিস্তা ২৮ দশমিক ২৩ মিটার, ব্রহ্মপুত্র ১৭ দশমিক ৩৭ মিটার, ঘাঘট ১৯ দশমিক ২৫ মিটার এবং করতোয়া ১৯ দশমিক ৯৩ মিটার।

শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়া ও বোচাদহ এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বোচাদহ এলাকায় প্রায় ৬শ’ মিটার অংশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

পাশর্^বর্তী রাখালবুরুজ ইউনিয়নের বিষপুকুর এলাকাতেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, যে কোন মূহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও বাড়িঘর তলিয়ে যেতে পারে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির উন্নয়ন বোর্ডের কোন কার্যক্রম না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাঁধটি ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্যার সময় আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কিছু বালু ভর্তি বস্তা ফেলা হলেও স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এ কারণে প্রায় প্রতিবছরই বাঁধ ভেঙ্গে নদীর পানি ঢুকে পড়ায় স্থানীয়রা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।

চরবালুয়া গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল আলম রাজা বলেন, ভাঙ্গন রোধে অবিলম্বে স্থায়ী ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে মহিমাগঞ্জ, কোচাশহর, শিবপুর, শালমারা ও রাখালবুরুজ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতশত একর জমির উঠতি আখ, কলা, আগাম সব্জি ও আমন ধানের আবাদসহ বিভিন্ন ফসল এবং বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুর হক জানান, গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ি উপজেলার কয়েকটি পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি স্থানে জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উপজেলার বিষপুকুর, বালুয়া, বোচাদহ ও পলাশবাড়ির কিসামত চেরেঙ্গা পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন পরিস্থিতি রোধ করা হচ্ছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়াামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধটি পরিদর্শন করে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নিক্ষেপ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। বিষপুকুর এলাকার ভাঙ্গনঝুঁকিতে পড়া বাঁধের অংশে জিও ব্যাগ নিক্ষেপের আগে সেখানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় যে কোনো মূল্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি রক্ষা করতে পাউবো সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ