ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
সারাদেশে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের কোনো না কোনোভাবে শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৩ জন এমপি বাদ পড়েছেন -এটা কি একরকম শাস্তি নয়! মন্ত্রিপরিষদে ২৫ জন নেই। সময় মতো শাস্তি হবে। এটা একটা উদাহরণ।
সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সভাপতিম-লীর বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির আগ্রহ কোনোদিনই ছিল না। দলটি ’৭৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। মাগুরা মার্কা ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার, ‘হ্যাঁ-না’ ভোটে ১১৪ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি- এসবই বিএনপির সৃষ্টি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করার কাজটি করেছেন শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশনকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অধীন থেকে মুক্ত করে আইন করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। ৮২টি সংশোধনী এনেছেন। আর বিএনপি কি করেছে? পৃথিবীর কোনো দেশেই গণতন্ত্র শতভাগ পারফেক্ট নয় জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরাও পারফেক্ট এমন দাবি করি না। তবে গণতন্ত্রকে ত্রুটি মুক্ত করার চেষ্টা আমাদের রয়েছে। গণতন্ত্রকে ম্যাচুরিটি করতে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।
এ সময় উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী এমপির স্বজনরা অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেনি – এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের নিবৃত্ত করার জন্য দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাদের আরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এরপরও দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাফ জানিয়ে দেন, যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের কোনো না কোনোভাবে শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সঙ্গে বৈঠক করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে সম-সাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ করে সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করব। সেদিন সকালে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো নেত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। সারাদেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করা হবে। দুপুরে দেশের মসজিদ মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচি পালিত হবে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ১৬ মে দুপুরে অসচ্ছল গরিব সাধারণ মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এদিন বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের অডিটরিয়ামে। সাজসজ্জা যেটা হবে সেটি হচ্ছে ব্যানার ফেস্টুন, বিল বোর্ড, আইল্যান্ডগুলো সজ্জিত করা হবে ১৭ তারিখে। আলোকসজ্জা কর্মসূচি থাকবে না।
দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী দলের প্রতিষ্ঠার হীরক জয়ন্তী উদযাপন করা হবে। ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সারা বাংলাদেশে থানা উপজেলা ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়েও এ কর্মসূচি পালন করা হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা হবে এদিন বিকেলে। এতে নেত্রী, নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সমমনস্ক ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাব। মসজিদ মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রচেষ্টা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সবুজ ধরিত্রী’ কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হবে। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় আলোকসজ্জা বাদ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংকটের প্রেক্ষিতে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আনন্দ র্যালি করবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন। ১১ মে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন আরও বিস্তারিত বলা যাবে।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এর আগে আমাদের সব অনুষ্ঠানেই বিএনপিকে দাওয়াত দিয়েছি, এবারও বিএনপিকে দাওয়াত দেওয়া হবে। অন্য রাজনৈতিক দলও পাবে।
সম্পাদকম-লীর সভায় এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মাশরাফী বিন মোর্তজা, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।