পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

চারদিনের সফরে ভুটানের রাজা আসছেন সোমবার

তিন সমাঝোতা সই

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
চার দিনের (২৫ থেকে ২৮ মার্চ) রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে ঢাকায় আসছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক। গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশের নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভুটানের রাজার সফর হবে এই সরকারের সময়ে প্রথম কোনো ভিভিআইপি সফর।

গত ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সফরকালীন সময়ে ভুটানের রাজাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই সফরে ভুটানের রাজা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি একাধিক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। এই সফরে বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে তিনটা সমঝোতা স্মারক সই হবে।

ভুটানের রাজার সফর উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত রোববার (২৪ মার্চ) এক প্রেসব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ২৫ মার্চ ঢাকায় আসছেন। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর এটি বাংলাদেশে বিদেশি কোন দেশের শীর্ষ নেতার প্রথম সফর।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোমবার সকালে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুককে স্বাগত জানাবেন। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ ভুটান। এ সফরে রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও রানি জেতসুন পেমা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ভুটানের রাজার সফরে নতুন করে তিনটা সমঝোতা স্মারক সই এবং একটি নবায়ন হবে। সেগুলো হলো ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি নবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সোমবার বিকেলে বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকগুলো সই হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক সফরের শুরুর দিন সোমবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরদিন মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোরে ভুটানের রাজা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন এবং সেখানে একটি বৃক্ষরোপণ করবেন। স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে সকাল সাড়ে ১০টায় রাজা রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে যাবেন। সেখানে ভারত থেকে ফিরে এসে বাংলাদেশে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া ভুটানের রোগী কারমা দেমার সঙ্গে কথা বলবেন। ২৬ মার্চ বিকালে রাজা ও রানি বঙ্গভবনে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ উচ্চপর্যায়ের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত থাকবেন। পরে বঙ্গভবনে ইফতার ও ডিনারে অংশ নেবেন রাজা-রানিসহ অতিথিরা।

২৭ তারিখ সকালে পদ্মা সেতু পরিদর্শনে যাবেন ভুটানের রাজা। এদিন আড়াইহাজারে জাপান-বাংলাদেশের যৌথ ব্যবস্থাপনার ইপিজেড পরিদর্শন করবেন তিনি। বিকাল ৪টায় ঢাকায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ভুটানের রাজা। বাংলাদেশের ভুটান দূতাবাস এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। ২৮ মার্চ ঢাকা থেকে বিমানে সৈয়দপুর যাবেন রাজা। সেখান থেকে সড়কপথে কুড়িগ্রামের ইপিজেডে যাবেন। ইপিজেড পরির্দশন শেষে সড়কপথে রওয়ানা দিয়ে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসাম হয়ে ভুটান যাবেন। স্থলবন্দরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদান করবেন। সেখানে ভুটানের রাজাকে বিদায় জানাবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তবে রানি এবং রাজার সফর সঙ্গীদের একাংশ ২৭ তারিখে বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুটানের রাজার সফরের সময় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ও পর্যটন ক্ষেত্রে নিবিড়তর সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো থাকবে। এছাড়া সংযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক উদ্যোগে সমন্বিত সহযোগিতা, কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ট্রানজিট চুক্তি এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিনিময়ের ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রস্তাব এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।

ভুটানের রাজার বাংলাদেশ সফরের তাৎপর্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে বাংলাদেশে প্রথম কোনো উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর এটি। এ সফরে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে (বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে) ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। থিম্পুতে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধন হবে। ট্রানজিট এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ হবে। বিদ্যুৎ খাতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, এই সফরে প্রতিবেশি দেশ ভুটানের জনগনের জন্য বাংলাদেশ সরকার একগুচ্ছ উপহার দিচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, আগামী বছর থেকে ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে বরাদ্দকরা বার্ষিক আসন সংখ্যা ২২ থেকে ৩০ এ উন্নীত করা, প্রতিবছর ভুটানের ফরেন সার্ভিস অফিসারদের জন্য বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য ২টি আসন বরাদ্দ করা, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভুটানে একটি কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা দিবে, বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলে ভুটানের কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে ৩ বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা এবং ভুটানের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ল্যাপটপ ও ট্যাবসহ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস উপহার হিসেবে দেওয়া হবে।

এর আগে, বিগত ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সফরে করেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও রানি জেতসুন পেমা।

তথ্যসূত্রঃসময়ের আলো

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ