ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এবং এর জিম্মি নাবিকদের জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করতে সোমালিয়ার পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির পান্টল্যান্ড অঞ্চলের পুলিশ সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েনে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় কমান্ডোরা ১৭ ক্রুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার পর এমভি আবদুল্লাহতে অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজটি। জলদস্যুরা এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে। নাবিকদের সবাই বাংলাদেশি।
পান্টল্যান্ড সোমালিয়ার একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। সেখানে অনেক জলদস্যু দলের ঘাঁটি রয়েছে। ওই এলাকার পুলিশ বাহিনী রয়টার্সকে বলেছে, এমভি আবদুল্লাহকে দখলে রাখা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের একটি পরিকল্পনা তারা জানতে পেরেছে। সে কারণে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। অভিযানে অংশ নিতেও প্রস্তুত তারা। এর আগে রোববার এমভি আবদুল্লাহ দখল করে রাখা জলদস্যুদের জন্য ‘খাত’ নামের এক ধরনের মাদক নিয়ে যাওয়ার সময় একটি নৌযান জব্দ করার কথা জানিয়েছিল পান্টল্যান্ড পুলিশ। তার আগের দিন শনিবার সোমালি উপকূলে ৪০ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে এমভি রুয়েনকে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করেন ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডোরা। জাহাজটির ১৭ ক্রুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার পাশাপাশি জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাইকে তারা আটক করেন। ৩ মাস আগে আরব সাগরে মাল্টার পতাকাবাহী ওই জাহাজ দখল করে নেওয়ার পর নাবিকদের জিম্মি করে জলদস্যুরা। পরে ওই জাহাজ ব্যবহার করে বিভিন্ন নৌযানে তারা হামলা চালাতে থাকে।
বাংলাদেশের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ছিনতাইয়ের সময়ও জলদস্যুরা এমভি রুয়েনকে ব্যবহার করে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ভারতীয় নৌবাহিনীর এক যুদ্ধজাহাজ গত বৃহস্পতিবার সকালে এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছেছিল। তবে নাবিকরা সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকায় সে সময় অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকেন ভারতীয় নৌ সেনারা।
জানা গেছে, পূর্ব আফ্রিকা উপকূলে জলদস্যুতা নির্মূলে কাজ করে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সও তাদের ‘অপারেশন আটলান্টার’ অংশ হিসেবে এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইউরোপীয় এই বাহিনী আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ সরকার তাতে সায় দেয়নি। অবসরপ্রাপ্ত এই রিয়ার অ্যাডমিরাল এক টেলিভিশনের আলোচনায় বলেন, নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই অভিযানের ওই প্রস্তাবে সরকার ও মালিক পক্ষ রাজি হয়নি।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড অঞ্চলের পুলিশ এখন যে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের কথা বলছে; তাতে কোন কোন দেশের বাহিনী থাকছে, তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে রয়টার্স ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কোনো জবাব পায়নি।
তবে পান্টল্যান্ডের নৌ-পরিবহন মন্ত্রী আহমেদ ইয়াসিন সালাহ বিবিসি সোমালিয়াকে বলেছেন, এমভি রুয়েনের মতো আবদুল্লাহকেও জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত করতে অভিযানের পরিকল্পনা চলছে।