ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সময়ের জন্য নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে অর্থ জোগান কমিয়ে সংকোচনমূলক এই নীতি ঘোষণা করেন।
এছাড়া, ক্রলিং পেগ নামের নতুন বিনিময় হার পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাজারে অর্থের জোগান কমাতে মুদ্রানীতির সকল লক্ষ্যমাত্রার অবনমন করা হয়েছে; এর আওতায় জুনের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বিদ্যমান ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিতিশীলতাকে কেন্দ্র করে জ্বালানি তেলের দামে অস্থিরতা; বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া; মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা; বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখা এবং মন্দ ঋণ (নন পারফর্মিং লোন বা এনপিএল)-কে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যেই নতুন মুদ্রানীতি প্রকাশ করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলাই হবে তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে মন্ত্রীদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করার নির্দেশনা দেন তিনি।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক টিবিএসকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক ধারা অব্যাহত রাখবে। এছাড়া, কর্পোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার বিষয়ে মনোযোগ নতুন বছরেও অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, “আমরা কর্পোরেট গভর্নেন্স নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তা নতুন বছরও অব্যাহত থাকবে। আমানতকারীদের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো পদক্ষেপ নেবে। কারণ আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা দেয়াই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূলনীতি।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩ সালে দেশের অভ্যন্তরে নানামুখী চ্যালেঞ্জ ছিল; ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু ব্যাংক ঋণের সুদহার বাজার ভিত্তিক করা হয়েছে। এই সুদহারের একক রেটে ২০২০ এর এপ্রিল থেকে সীমা দেয়া ছিল। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একাধিকবার পলিসি রেট (নীতি সুদহার) বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তাতে আশা করা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
যদিও এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, তাঁরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানান পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে এ চলে আসবে। কিন্তু, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৪১ শতাংশ। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১.৫ শতাংশ বেশি।
এছাড়া ২০২৪ সালের জুনের মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামবে বলেও আশাপ্রকাশ করেছিলেন গভর্নর।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থ সরবরাহ-ভিত্তিক থেকে মুদ্রানীতির থেকে সরে এসে সুদহার-ভিত্তিক মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হয়।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে, রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়।
কিন্তু, তাতেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায়– গত ছয় মাসে বেশ কয়েকবার নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। সবশেষ গত ২৭ নভেম্বর যা ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়।