পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

‘অচেনা উইকেটে’ টেস্টের চ্যালেঞ্জ

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ ক্রিকেটে চলছে এখন চোটের মিছিল। বিশ্বকাপ থেকে চোট নিয়ে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। বাঁ-হাতের তর্জনীর ইনজুরির কারণে এখন মাঠের লড়াইয়ে দর্শক বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন। কাঁধের ইনজুরি জ্বালিয়ে মারছে তারকা পেসার তাসকিন আহমেদকে। পারিবারিক কারণে দলে নেই লিটন দাস। পিঠের চোটের জন্য বিশ্বকাপেই খেলতে পারেননি দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। এদিকে পায়ের অপারেশন শেষে দেশে ফেরা ইবাদত হোসেনকে আবারও ইংল্যান্ড পাঠাচ্ছে বিসিবি। সব মিলিয়ে বলতে গেলে তারকাশূন্য একটি দল নিয়েই মাঠে নামছে বাংলাদেশ।

২৮ নভেম্বর মাঠে গড়াতে যাওয়া সিলেট টেস্টে টাইগারদের প্রতিপক্ষ আর কেউ নয়, সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট নিউজিল্যান্ড। তারুণ্যনির্ভর দল নিয়ে কিউইদের মোকাবিলা করবে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। শুধু খেলার জন্যই খেলা নয়। বিশ্বকাপে ভরাডুবির হতাশা ক্রিকেটাররা ভুলতে চান আসন্ন এই টেস্ট সিরিজ দিয়ে। নতুন এই অভিযানে বাংলাদেশের ভরসা কেবল গুটিকয়েক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার- মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, তাইজুল ইসলাম ও নুরুল হাসান সোহান। বাকিরা সবাই তরুণ। এমন একটা আনকোরা দল নিয়ে ব্ল্যাক ক্যাপস শিবিরের মুখোমুখি হওয়া বাংলাদেশের জন্য যারপরনাই চ্যালেঞ্জিং। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তো এমনটাই মনে করছেন।

বিশ্বকাপের পর গতকাল রবিবার সিলেটে প্রথমবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন হাথুরুসিংহে। সিনিয়রদের না পাওয়াকে যেমন চ্যালেঞ্জ মানছেন কোচ, ঠিক তেমনি তরুণদের পরখ করার সুযোগ হিসেবেও দেখছেন, ‘এ ধরনের অভিজ্ঞতা মিস করাটা চ্যালেঞ্জিং। এতটা অভিজ্ঞতা একসঙ্গে হারানো। সেটা যেকোনো দলের জন্যই সত্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। কারণ এই ছেলেরা সব ফরম্যাটে কেউ ১৫ বছর, কেউ ১০ বছর ধরে আছে। এটা হচ্ছে একটা দিক। আরেকটা দিক হচ্ছে তরুণরা কী করতে পারে, তা দেখার একটা সুযোগ এটা।’

দলে নেই সাকিব-তামিমদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা। অভিজ্ঞরা না থাকায় দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে তরুণদের। এমন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে তরুণদের প্রমাণের সুযোগের মেলবন্ধনে আশাবাদী বাংলাদেশ কোচ, ‘আমার মনে হয় অনেক দিন ধরে খেলছে এমন ক্রিকেটারদের সরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় এটা। তারা সারা জীবন থাকবে না। এখন নেই নানা কারণে। এটা রোমাঞ্চকর তরুণ কয়েকজন ক্রিকেটারের জন্য, তাদের নাম জানাতে ও লম্বা ক্যারিয়ারের শুরু হতে পারে এখানে।’

চোট কাটিয়ে শতভাগ ফিট নন তাসকিন ও ইবাদত। তারকা দুই পেসারকে নিয়ে হাথুরু জানান, ‘ওরা (তাসকিন ও ইবাদত) আমাদের সেরা বোলার। কিন্তু একই সঙ্গে এটা অন্যদের জন্য সামনে এগিয়ে আসার সুযোগও। আমরা একই সেটের বোলার দিয়ে অনেক পথ পাড়ি দিতে পারব না। ওদের না থাকাটা খালেদ, শরিফুল, হাসানদের জন্য সুযোগ; ও (হাসান) এখনও টেস্ট খেলেনি। যদি তারা খেলার সুযোগ পায়, নিজেদের চেনানোর দারুণ সুযোগ হবে এটা তাদের জন্য।’

প্রথমবারের মতো লাল বলের দলে জায়গা পেয়েছেন হাসান মুরাদ। তবে এ তরুণ লেগস্পিনারের কাছে বাড়তি কোনো চাওয়া নেই হাথুরুর। মুরাদের কাছে স্বাভাবিক খেলাটাই প্রত্যাশা করছেন কোচ, ‘হাসান মুরাদের কাছে আমার বার্তা থাকবে, এক্স ফ্যাক্টর হতে হবে না। গত দুই এনসিএলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়েছো। ওখানে যা করেছো, এখানেও তাই করো।’

হাসান মুরাদের সঙ্গে দলে স্পিনার আছেন আরও অনেকে। মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম প্রস্তুত হয়ে আছেন মাঠে ঘূর্ণিজাদু দেখাতে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রে সাফল্য পেতে এই স্পিনারদের দিকেই তাকিয়ে হাথুরুসিংহে, ‘তাইজুল মিরাজ অনেক অভিজ্ঞ। তাইজুলের সম্ভবত ২০০ টেস্ট উইকেট আছে। অবশ্যই সে লিড করবে, সঙ্গে মিরাজ আছে। তরুণ মুরাদ, নাঈম হাসান আছে। আমি মনে করি, এই কন্ডিশনে স্পিনাররা বড় ভূমিকা পালন করবে।’

২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যারপরনাই বাজে পারফরম্যান্সের পর নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে চমক দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে স্বাগতিক কিউইদের হারিয়ে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের রূপকথার গল্প লিখেছিল টাইগাররা। পরিস্থিতিটা এবার প্রায় একই রকম। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি শেষে দেশে পা রেখেছেন শান্ত-মেহেদিরা। সেবারের মতো এবারও নেই সাকিব ও তামিম। মাহমুদউল্লাহ তো অবসরই নিয়েছেন ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণ থেকে। এবার অভিজ্ঞ বলতে মুশফিক ও মুমিনুলরা। প্রতিপক্ষ সেই একইÑ নিউজিল্যান্ড। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট নিয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে বারবার প্রশ্ন উড়ে যাচ্ছিল হাথুরুর দিকে। কিন্তু লঙ্কান এ কোচ সেই সুখস্মৃতিতে ভেসে যেতে নারাজ। সেসব নিয়ে ভাবছেন না হাথুরু, ‘অন্য একটা দেশের কথা বলছেন আপনারা। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন খেলা।’

সিলেটে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা কম বাংলাদেশের। একমাত্র টেস্টটি খেলেছিল টাইগাররা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ২০১৮ সালে। অভিজ্ঞতা রয়েছে বলতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির। এ কারণে সিলেটের উইকেট হাথুরুর কাছে বড়ই অচেনা, ‘আমরা এখানে খুব বেশি টেস্ট ম্যাচও খেলিনি। একটি টেস্ট খেলেছি, যদি আমি ভুল না করে থাকি। আমরা জানি না উইকেট কেমন আচরণ করবে। কারণ আমাদের এখানে খেলার ইতিহাস নেই। এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সবই অজানা।’

টাইগাররা সবশেষ লাল বলে খেলেছে গত জুনে, আফগানদের বিপক্ষে। পরে বিশ্বকাপের জন্য ওয়ানডে নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিল দল। টেস্ট ক্রিকেটাররা জাতীয় লিগে খেলে নিজেদের প্রস্তুত করেছেন। বিশ্বকাপে খেলা ক্রিকেটাররাও নিজেদের ঝালাই করেছেন এনসিএলের শেষ রাউন্ডে খেলে। হাথুরুসিংহে তেমনটাই বললেন, ‘আমরা এনসিএল ম্যাচ ব্যবহার করেছি খেলোয়াড়দের প্রস্তুতির জন্য। বিশেষ করে যারা বিশ্বকাপে খেলেছিল, তাদের জন্য। বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। এ ছাড়া বাকিরাও এনসিএল খেলছিল।’ দলটাও যে নতুনে ঠাসা, সেটিও যোগ করেন প্রধান কোচ, ‘আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে এই দলটা একদমই নতুন চেহারার বাংলাদেশ দল। নানা কারণেই এটা হয়েছে, কিছু চোট…। আমি মনে করি, আমরা যতটা সম্ভব প্রস্তুত।’

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ