ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এর আগে গত ১৮-২১ নভেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা পড়ে ৩ হাজার ৩৬২টি। এতে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় করে দলটি। গত ২৩ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত তিন ধাপে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বাছাইয়ে দলীয় সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি ও দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
আর রোববার বিকালে রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৩০০ আসনের মধ্যে ২টি বাদ রেখে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এর আগে গতকাল বেলা ১১টায় গণভবনে দলের ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা সান্ত্বনা দেন। একই সঙ্গে আসন্ন নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় সেটিও খেয়াল রাখতে নির্দেশনা দেন তিনি। তিনি জানিয়ে দেন বিরোধী দল না এলে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করতে প্রয়োজনে আসন উন্মুক্ত করা হবে। নির্বাচনে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলীয় প্রার্থীদের সাবধান করে দেন তিনি। একই সঙ্গে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করার নির্দেশও দেন। কেউ স্বতন্ত্র দাঁড়ালে তাকে কোনোভাবেই বাধা দেওয়া যাবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন চাই। সে ক্ষেত্রে জোটের কথা এখনই ভাবছি না। এখনও সময় আছে। দেখি কোন কোন দল নির্বাচনে আসে। তারপর জোট করার চিন্তা করা হবে।
মতবিনিময় সভা সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে উৎসব ও প্রতিযোগিতামূলক করতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্যান্য দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকেও সহযোগী ও উৎসাহ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যদি কোনো আসনে জয়ী হয় তা হলে বিজয়ী প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যেকোনো নেতা বা যেকোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন বলেও নির্দেশনা দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সংগ্রাম ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আজকে এই জায়গায় এসেছে। এখন সুদিন। অনেকেই দলে ভিড়তে চাইছেন। দলের ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। সবাইকে দলীয় মনোনয়ন দিতে পারবে না আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে ৩০০ জনকেই মনোনয়ন দিতে হবে। ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা ঠিক করা হয়েছে। তাই আপনাদের কাছ থেকে ওয়াদা চাই, কেউ দলের বিরুদ্ধে বা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করবেন না। এ সময় সবাই হাত তুলে শেখ হাসিনাকে ওয়াদা দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আসন্ন ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই আমি চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হোক। কোনোভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ভয়ভীতি দেখানো যাবে না। তাদের ওপর হামলা করা যাবে না। আর দলের যে প্রার্থী থাকবে, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নৌকার বিরোধিতা করা যাবে না। আমার কাছে যদি এমন কোনো অভিযোগ আসে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কেউ যদি বিদ্রোহী প্রার্থী হতে চান, সেটি তার ব্যাপার। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পাশ না করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু নৌকার বিরোধিতা করা যাবে না। ভোট কেন্দ্রে ৪৫-৫০ ভাগ ভোটার কেন্দ্রে আনতে হবে। যদি কেউ অলসতা দেখায়, তার বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে।
সভায় উপস্থিত একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, নেত্রী বলেছেন আপনারা সাড়ে তিন হাজারের মতো প্রার্থী। এর মধ্যে থেকে আপনারাই আমাকে ৩০০ নাম দেন। পরে উপস্থিত সবাই নেত্রীকে দায়িত্ব দেন। শেখ হাসিনা নির্বাচনে ডামি প্রার্থী রাখতে বলছেন। যে কেউ চাইলে নির্বাচন করতে পারবে বলেও জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী হিসেবে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে তাদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি সবাই যেন ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার কথা বলেছেন। মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর পাশাপাশি ডামি ক্যান্ডিডেটও (বিকল্প প্রার্থী) রাখতে বলেছেন, যেন কারও মনোনয়ন বাতিল বা মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে যেন ডামি ক্যান্ডিডেট নির্বাচন করতে পারে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সময়ের আলোকে বলেন, নেত্রী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিকল্প প্রার্থী রাখতে বলেছেন নির্বাচনে যাতে কেউ কোনো ধরনের অনিয়ম করতে না পারে। ভোটারের উপস্থিতি যাতে বাড়ে, সে জন্যও কাজ করতে বলেছেন।
অন্যদিকে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি মন্তব্য করে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কোনো মুরুব্বি নেই, আমাদের মুরুব্বি জনগণ। আমাদের অগণিত নেতাকর্মী আছে, জনগণের সমর্থন আছে। কাউকে তোষামোদি করে ক্ষমতায় থাকতে হবে, সেই রাজনীতি বঙ্গবন্ধুর কন্যা করে না।
টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের করা বিভিন্ন উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় দেশের মানুষ শান্তি পেয়েছে, স্বস্তি পেয়েছে, মানুষ ভালো থাকতে শুরু করেছে। আসন্ন নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দিলে, আমরা সরকার গঠন করতে পারলে উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। এ মাটি আমাদের। এখানে কারও খবরদারি বরদাস্ত করা হবে না। জনগণই আমাদের শক্তি এবং আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল নই।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গত ১৫ বছরে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় জনগণ শান্তিতে রয়েছে। দেশের জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করছি। দলমত নির্বিশেষে সবার দায়িত্ব আমার। তারা আমার পরিবার। বিএনপি দেশের মানুষের কল্যাণ চায় না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের ওপর তাদের আস্থা-বিশ্বাস নেই। সে জন্য তারা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে।
নাশকতা ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত দুষ্টচক্র যেন মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে, সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনি প্রচার ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোট গ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।