ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
গত কয়েক দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মানুষ জলবায়ু সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে। যারাই দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে তারা নিজেদের উত্তরণের জন্য অনেক সময় নিতে হয়েছে। এখন স্বল্প সময়ের উত্তরণের পর দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সবুজ প্রযুক্তি। বিশ্বব্যাংক এ প্রযুক্তিকে উৎসাহ দেয় এ জন্য যে এতে উচ্চ উৎপাদনশীলতা আসে। এতে বিনিয়োগে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংক ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) আয়োজিত ‘টুওয়ার্ড ফাস্টার, ক্লিনার গ্রোথ ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক কনফারেন্সে এসব আলোচনা হয়। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, কেবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণেই বছরে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি ডলার। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে ঘর ছাড়া হতে পারে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ।
আবদুলায়ে সেক বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশেষ করে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকি আছে। যা দেশগুলো কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না। এ ধরনের দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গরিব মানুষ। এ অঞ্চল একই সঙ্গে সম্ভাবনাময় বাজারও। টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য শিল্প কারখানাগুলোতে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করি। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের প্রবৃদ্ধি নির্ভর নীতি হাতে নিতে হবে। এ দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। বড় সুবিধা আদায়ের জন্য ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণের পথে হাঁটতে হবে। এতে পরিবেশ রক্ষার আইডিয়া থাকা দরকার। তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে অবশ্যই পরিবেশ ও জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আরও অনেক কিছু করতে হবে। সবুজ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে জলবায়ু ঝুঁকির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যেও জনগণকে দারিদ্র্য কমানোর জন্য নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছি। এ জন্য দেশে এ সংক্রান্ত আরও প্রকল্প আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।
জলবায়ু মোকাবিলায় বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য আরও অগ্রাহী আমরা। এ জন্য ইতিমধ্যে ডেল্টা প্লান, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এতে আমাদের বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে প্রাধান্য পাচ্ছে কৃষি ও মাছ উৎপাদন নিয়ে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। তাদের সঙ্গে জি টু জি ভিত্তিতে কাজ হচ্ছে। আমরা জলবায়ু রক্ষার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে ধীরে ধীরে সৌরবিদ্যুৎসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে মনোযোগ দিয়েছি। এখানে এখন বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। হাওর ও পাহাড় অঞ্চলের কর্মসূচির কথা স্মরণ করিয়ে এমএ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন হাওরে আর কোনো রাস্তাঘাট নয়।
এর মধ্যেই আমরা সুনামগঞ্জের সঙ্গে নেত্রকোনোর সংযোগের জন্য উড়াল সড়ক করছি, যাতে হাওর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যেনেশুনে এমন প্রকল্প হাতে নেব না যাতে আমাদের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের খাগড়াছড়িসহ পাহাড়গুলোতে বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।
তার মতে, সবুজ উন্নয়নে বাংলাদেশ কিছু চিত্তাকর্ষক অগ্রগতি করেছে। উদাহরণস্বরূপ সবুজ কারখানার সংখ্যায় আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর বিশ্বের সেরাদের মধ্যে রয়েছে।
একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার অংশ হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনা কথা জানিয়ে এ খাতে এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়ন বাড়ানোর আহ্বান জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে যাচ্ছে। এর মধ্যে ধীরগতির প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক সংকটে সীমাবদ্ধ কয়েকটি দেশ। এ দেশগুলোর অর্থনীতিকে বৈশ্বিক জ্বালানি পরিবর্তনের সঙ্গে মানানসই করতে আর্থিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বৈশ্বিক জ্বালানি পরিবর্তনের সঙ্গে উৎপাদনশীলতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বায়ুদূষণ হ্রাস এবং জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর সুযোগ রয়েছে। এমনকি সীমিত আর্থিক সক্ষমতার মধ্যেও দেশগুলো বাজারভিত্তিক নীতি, তথ্য প্রচার, অর্থের সংস্থান এবং নির্ভরযোগ্য পাওয়ার গ্রিডের ব্যবস্থার মাধ্যমে আরও শক্তি-দক্ষ প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জ্বালানির উত্তরণ দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমবাজারকে নতুন আকার দেবে। এই অঞ্চলের প্রায় এক-দশমাংশ শ্রমিক দূষণের মধ্যেই কর্মক্ষেত্রে কাজ করেন। অদক্ষ এবং অনানুষ্ঠানিক কর্মীদের মধ্যেই এ দূষণ প্রভাব ফেলে। প্রতিবেদনে এ ধরনের কর্মীদের সুরক্ষার জন্য বিস্তৃত নীতির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চমানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, অর্থ ও বাজারে আরও ভালো সুযোগ প্রদান; কর্মীদের গতিশীলতা সহজতর এবং সামাজিক নিরাপত্তা জাল শক্তিশালী করা।