ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল যোগাযোগের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। শেখ হাসিনা আজ সকালে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া রেলস্টেশনে এক সময় নাগরিক সমাবেশে বোতাম চেপে ডিজিটল পদ্ধতিতে রেল সার্ভিসের উদ্ধোধনের পর তিনি বলেন, ‘ট্রেনে পদ্মা সেতু অতিক্রম করার স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে আন্ত:এশীয় রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্য আমাদের রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘এ লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
সুত্র জানায়, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই রেলরুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
রেল সংযোগটি সম্পূর্ণ চালু হয়ে গেলে এটি ঢাকা থেকে যশোরের মধ্যে যাতায়াতের সময় অর্ধেক সাশ্রয় হবে এবং দেশের রেল যোগাযোগকে জোরদার করতে বড় ধরনের সহায়তা করবে।
পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪টি জেলাকে রেলওয়ে নেটওর্য়াকের আওতায় আনা হলে রেল যোগাযোগ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে বিশেষ ট্রেনের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়।
রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সেনা প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দীন আহমেদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য (মুন্সিগঞ্জ-২) সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি ও বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির স্বাগত বক্তব্য রাখেন। রেলপথ মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল যোগাযোগের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় নাগরিক সভায় যোগদান করেন। নাগরিক সভাটি পরে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।পরে প্রধানমন্ত্রী টিকিট কেটে বিশেষ ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যাচ্ছেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর পৈতৃক বাসভবনের উদ্দেশে ভাঙ্গা ত্যাগ করবেন। সেখানে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ার বাসভবনে এক রাত কাটানোর পর বুধবার দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে গোপালগঞ্জ ত্যাগ করবেন এবং বিকেলে ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহা সমাবেশে যোগ দেন।
প্রকল্পের বিবরণে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করছে। এর ৮২ কিলোমিটার অংশ ঢাকা ও ভাঙ্গাকে সংযুক্ত করেছে এবং আজই খুলে দেওয়া হয়েছে। যশোরকে সংযোগকারী অবশিষ্ট অংশ আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত বছরের জুনে যুগান্তকারী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল সার্ভিস আজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের’ আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯,২৪৬.৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ২১,০৩৬.৭০ কোটি টাকা। সমাপ্ত হওয়ার পর রেল যোগাযোগ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী শহরের যোগাযোগ উন্নত হবে এবং মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং নড়াইল জেলার নতুন এলাকাকে যুক্ত করবে।
প্রকল্পটি ঢাকা-যশোর-খুলনাকে ২১২.০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট দিয়ে বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপন করবে।
এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওর্য়াকের আরেকটি উপ-রুট স্থাপন করবে এবং জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মালবাহী এবং বিজি কন্টেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। কারণ, এই রুটটি কন্টেইনার বহনের জন্য গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।