পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে...
শনিবার, অক্টোবর ১৯, ২০২৪

ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফর: চলমান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সমর্থন

ছয় দফা নিউজ ডেস্ক:
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, অভিবাসন, অবকাঠামো উন্নয়ন, রেলসেবা, ইউক্রেন যুদ্ধ, ইন্দো-প্যাসিফিক, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং আন্তর্জাতিক ইস্যূ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট এবং বাংলাদেশের শহুরে অবকাঠামো উন্নয়ন-সংক্রান্ত দুটি চুক্তিও সই হয়েছে। এই সফরকে তাই খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ চলছে, সেই প্রক্রিয়াকে সম্মান দিয়েছে এই সফর। বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা চাপে থাকা সরকারকে ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই সফর স্বস্তি দেবে।

সেপ্টেম্বরের এই সপ্তাহে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরের আগে বাংলাদেশ সফর করেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাইডলাইনে ভারত, সৌদি আরবসহ একাধিক দেশের শীর্ষ প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, বৈশ্বিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরে অর্থনীতিই প্রাধান্য পেয়েছে।

সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন। পরস্পরের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও প্রগতি রক্ষার সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলেছেন তিনি। দুই দেশের মানুষের মধ্যে আরও সংযোগ বাড়ানোর বার্তা দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দুই পক্ষ একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। পানি বিশুদ্ধকরণ প্রকল্প, নবায়নযোগ্য শক্তি, স্বাস্থ্যসহ একাধিক ইস্যুতে ফ্রান্স সহযোগিতা করায় বাংলাদেশ ফ্রান্সের গভীর প্রশংসা করেছে।

দেশজুড়ে ৮৬টি পৌরসভার উন্নয়নে ফ্রান্সের উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলারেরে একটি চুক্তি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক সম্পদ যৌথভাবে আহরণের জন্য বাংলাদেশ ফ্রান্সকে প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী ২০২৫ সালে ফ্রান্স ও কোস্টারিকার যৌথ সভাপতিত্বে আয়োজিত জাতিসংঘের সমুদ্র-সংক্রান্ত সম্মেলনে দুই পক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে বলে এই সফরে সম্মত হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকটে সহায়তা করতে এই সফরে ফ্রান্স বাংলাদেশকে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ইস্যুটি সবসময় উপস্থাপনের জন্য দুই পক্ষ একমত হয়েছে। স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে তাদের বসত-ভিটায় ফিরে যেতে পারে এ জন্য রাখাইনে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে দুই পক্ষ সহযোগিতা করবে। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার তহবিলে সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ফ্রান্সকে অনুরোধ করেছে। যার প্রেক্ষিতে ফ্রান্স ১ মিলিয়ন ইউরো রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কর্মসূচিতে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই সফরে দুই পক্ষের মধ্যে আন্তর্জাতিক আইন, শান্তির সংস্কৃতি, বহুপক্ষীয় ফোরাম এবং জাতিসংঘ সনদের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। দুই পক্ষ প্রতিটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।

দুই পক্ষের মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই যুদ্ধের কারণে জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘন হচ্ছে বলে দুই পক্ষ একমত পোষণ করেছে। এই সফরে আইনের শাসন, অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে দুই পক্ষ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর করতে একমত প্রকাশ করেছে। দুই পক্ষ এই অঞ্চলে অবৈধ চলাচল ও অবৈধ মৎস্য আহরণের পরিবর্তে বৈধ ও স্বাধীনভাবে বাণিজ্য ও চলাচলের প্রতি জোর দিয়েছে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মো. ওয়ালিউর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, পৃথিবীতে ৭টি ধনী দেশের মধ্যে একটি ফ্রান্স। সেই দেশের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফর করেছেন, যা আমাদের জন্য সম্মানজনক। তাদের এখানে আসা, একাধিক ইস্যুতে চুক্তি করা; এগুলো বাংলাদেশের জন্য বড় পাওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ চালাচ্ছেন, সেই প্রক্রিয়াকে সম্মান দিয়েছে এই সফর। আমাদের গণতান্ত্রিক পন্থাকে তিনি সমর্থন করেছেন। এই সফরে দুই পক্ষের মধ্যে কিছু বিষয়ে চুক্তি সই হয়েছে, যা আমাদের জন্য ইতিবাচক। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসে আমাদের সংস্কৃতি বোঝার চেষ্টা করেছেন, তুরাগ নদ ভ্রমণ করেছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন, যা খুবই ইতিবাচক।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো, শহীদুল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার কাছে এই সফরটা অর্থনৈতিক। এই সফরে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সহযোগিতায় চুক্তি এবং এয়ারবাস ক্রয়ের কথা জানা গেছে, এগুলো অর্থনৈতিক কর্মকা-। আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার যেখানে পশ্চিমা চাপে আছে সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফর সরকারকে স্বস্তি দেবে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই সফরকে ক্যাশ করার চেষ্টা করবে সরকার।

এদিকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ আনু আনোয়ার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর নিয়ে সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) এ বলেন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ফ্রান্স বাংলাদেশের পক্ষে ছিল। আগামী দিনেও ফ্রান্স বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে, দেশটির প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে সেই বার্তা দিয়ে গেলেন।

তথ্যসূত্রঃসময়ের আলো

আরো পড়ুন

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ সংবাদসমূহ

বিশেষ সংবাদ